ভারতে করোনা সংক্রমণ ও তার জেরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে ফের একহাত নিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। জিএসটি নিয়ে রবিবার অনলাইন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি একাধিক বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন। জিএসটির ক্ষতিপূরণ না মিটিয়ে যেভাবে রাজ্যগুলিকে ধার করার নির্দেশ কেন্দ্র দিচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে বলেই দাবি করেছেন তিনি।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, ‘ভগবানের মার’। তার পাল্টা জবাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বললেন, ভগবান নয় প্রবঞ্চকের মার (act of fraud)। এই প্রবঞ্চক যে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকেই উদ্দেশ করে অমিত মিত্র বলতে চেয়েছে, তা বলা বাহুল্য। জিএসটি নিয়ে রবিবারে অনলাইন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রের একাধিক বিষয় নিয়ে সমালোচনায় মুখর হন। অমিত মিত্র এ দিন সাফ জানান, জিএসটির ক্ষতিপূরণ না মিটিয়ে যে ভাবে রাজ্যকে ধার করতে বলা হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে।
আরও পড়ুন : ‘খেলনা নিয়ে নয়, পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা চাই’, মোদীর ‘মন কি বাত’ কে বিঁধলেন রাহুল
জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে নির্মলা বলেছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যগুলি থেকে কেন্দ্রের প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা কম আয় হবে। তার মধ্যে সেস বাবদ আয় রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কেন্দ্রের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। চাইলে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছে এই টাকা ঋণ বা ধার হিসেবে নিতে পারে। কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
অমিত মিত্রের অভিযোগ, আসলে কেন্দ্র চাইছে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে কেন্দ্রীয়করণের পথে হাঁটতে। জিএসটি নিয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাব মানতে নারাজ বলে স্পষ্ট করে দেন অমিত মিত্র। জিএসটি পরিষদে নির্মালা জানিয়েছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি থাকা রাজ্যগুলির থেকে আয় কম হবে। এর মধ্যে সেস থেকে আয় রয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা কেন্দ্রের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়, সেটা ঋণ নিতে পারে রাজ্য। অথবা জিএসটি চালুর জন্য ক্ষতি ৯৭ হাজার টাকাও ঋণ নিতে পারে। কেন্দ্রকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে কোভিড। আর কোভিড ‘ভগবানের মার’। এভাবেই এ দিন ব্যাখ্যা করেছিলেন নির্মলা সীতারামন।
এদিন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, নোট বাতিলের সাত মাসের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে জিএসটি লাগু করার ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশের জিডিপি ছিল ৮ শতাংশ। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে জিএসটি লাগু করার ফলে ২০১৯-২০ সালে তা কমে হয়েছে ৪.২ শতাংশ। এক বছরে দেশে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অমিত মিত্র। তাই এর পর জিএসটির ক্ষতিপূরণ যদি ধার হিসেবে নিতে হয়, তাহলে রাজ্য আর্থিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলেই অভিযোগ করেছেন তিনি। বাংলা কোনওভাবেই কেন্দ্রের প্রস্তাব মানবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে। সেটাকেই হাতিয়ার করে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন অমিত মিত্র বলেন, এ নিয়ে সব রাজ্যকে এগিয়ে আসতে হবে। অমিতের প্রশ্ন, ক্ষতিপূরণ এড়াতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত লিখিতভাবে কেন জানানো হলো না? তাহলে রাজ্য আইনি মতামত নিতে পারত। উল্লেখ্য, পঞ্জাব, কেরল এবং দিল্লির অর্থমন্ত্রীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এই প্রস্তাব তাঁরা মানছেন না। একই পথে হাঁটতে পারে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও।
আরও পড়ুন : চীনকে মোক্ষম টক্কর, দক্ষিণ চিন সাগরে রণতরী মোতায়েন ভারতের