লালমাটির রোমান্টিক রাস্তা ধরে পাহাড়ি নিসর্গকে দু’চোখে রেখে দিকশূন্যপুরের দিকে যেতে যেতেই হঠাত্ থমকাতে হয় এক অপূর্ব লেক দেখে! গাঢ় নীল রঙা সে লেক দেখে মন যেমন বিমোহিত হয়, সৌন্দর্যসুধা আকণ্ঠ পান করে তৃপ্তির আধারও ভরে কানায় কানায়! এটাই বড়ন্তি লেক। রামচন্দ্রপুর সেচ প্রকল্পের অন্তর্গত এই লেকটির পোশাকি নাম রামচন্দ্রপুর জলাধার হলেও, লোকে একে বড়ন্তি লেক নামেই বেশি চেনে। বড়ন্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে সুন্দর এই জলাধারটি।
আসানসোল কিংবা মুরাডি স্টেশন থেকে আসা পাকা সড়ক ছেড়ে যেই ঢুকে পড়লেন লাল মাটির কাঁচা সড়কে, টিলায় ঘেরা ছোট ছোট আদিবাসী গ্রামের শান্ত স্নিগ্ধ রূপের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মন তার ভাললাগার উপকরণ পেতে শুরু করবে। পথের শেষ, লেক পেরিয়ে বড়ন্তি গ্রামের কাছে গিয়ে। এখানেই রয়েছে রাত্রিবাসের সুন্দর জায়গা। মুরাডি পাহাড়ের কোলঘেঁষা পথ ধরে লেককে ডান দিকে রেখে পৌঁছনো যায় বড়ন্তি পাহাড়ের ঠিক নীচে। সেখানেই বড়ন্তি গ্রাম।
বড়ন্তি খুব একটা উঁচু পাহাড়ের পর্যায়ে পড়ে না। হেঁটে উঠতে সময় লাগবে খুব বেশি হলে মিনিট পঁয়তাল্লিশ। তবে গাছপালার ঘন জঙ্গলে হাঁটাটার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এক অন্য রোমাঞ্চ।সবুজ গাছপালা ঘেরা অসম্ভব সুন্দর বড়ন্তিতে এলে মনে হয়, ভরপুর অক্সিজেন প্রতি মুহূর্তে জীবনীশক্তিকে দ্বিগুণ করছে। প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া যায় নির্মল আবহাওয়ায়। শরীর মন দুই-ই চাঙ্গা হয়।
আরও পড়ুন: হানাবাড়ি দেখতে চান? সপ্তাহান্তে ঘুরে আসতে পারেন মঙ্গলগঞ্জ থেকে, দেখা মিলতে পারে ভূতের
এবার গড় পঞ্চকোট চলুন গ্রামের পরিবেশের স্বাদ গ্রহণ করতে করতে। পৌঁছন সেই মুরাডি স্টেশন। যেতে হবে উল্টোদিকে মুরাডি থেকে আরও আট কিলোমিটার । রঘুনাথপুর হাইওয়ে ধরে। হাইওয়ে তে আট নয় কিলোমিটার যাবার পর ডান হাতি মোড়। দূর থেকে দেখা যায় পাহাড়ের শোভা। মোড় ঘুরে সেখান থেকে গ্রামের রাস্তা বেয়ে প্রায় আধ ঘণ্টায় পৌঁছন গড়পঞ্চকোটে। চারদিকে গাছগাছালি, সামনে বিশাল পঞ্চকোট পাহাড়, স্থানে স্থানে রাজপ্রসাদ, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ।
হাতে আরও দিন দুয়েক সময় থাকলে বড়ন্তি থেকে গাড়ি ভাড়া করে একে একে ঘুরে নেওয়া যায় পাঞ্চেত, মাইথন, গড় পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড় (‘হীরকরাজার দেশে’ ছবির কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল এখানেই), বিহারীনাথ ইত্যাদি দারুণ দারুণ সব জায়গা।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার। হাওড়া, শিয়ালদহ কিংবা কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া যে কোনও ট্রেনে আসানসোল। সেখান থেকে আদ্রা লাইনে তিনটি স্টেশন পরেই মুরাডি। স্টেশনে নেমে গাড়ি কিংবা রিকশাতে করে ছ’কিলোমিটার দূরের বড়ন্তি পৌঁছনে যায়। আসানসোল স্টেশনে নেমেও গাড়ি করেও যাওয়া যায় ৩৮ কিলোমিটার দূরের বড়ন্তিতে। আসার পথে রাস্তায় দিশেরগড় সেতুর আগে ছিন্নমস্তা মন্দির। দিশেরগড় সেতু থেকে দামোদর ও বরাকর— এই দুই নদীর মিলনদৃশ্য অসম্ভব ভাল লাগে। বড়ন্তি থেকে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির খরচ ১০ টাকা প্রতি কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের কোলে বসে অফিসের কাজ করতে চান? আপনার ঠিকানা হতে পারেন ‘কোকুন’