ভালোবাসা করে কয়…পাঁচ দশক পেরিয়ে বিদেশিনী প্রেমিকাকে ফিরে পেলেন রাজস্থানের বৃদ্ধ

সময়ের হিসাবও বোধহয় পথ হারায় ভালবাসার কাছে।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ভালবাসা মানে না বয়স। মানে না সীমান্তের ভেদাভেদ। মানে না দূরত্ব। মানে না ধর্ম। জাতপাত। সময়ের হিসাবও বোধহয় পথ হারায় ভালবাসার কাছে। যে চিত্রনাট্য সেলুলেয়েডে শিল্পীর মুন্সিয়ানায় শরীরে শিহরণ তোলে, আনন্দ বা দুঃখ দেয়, বাস্তব কখনও কখনও তাকেও ছাপিয়ে যায়। জীবনের নৌকা পথ খুঁজে নেয় অতীতে ফেলে আসা কোনও ঘাটের। এই গল্প কোনও কাল্পনিক চিত্রনাট্য নয়। বরং টাটকা বাস্তব। রাজস্থানের (Rajasthan) ৮২ বছরের এক ‘যুবকে’র!

জীবনের অধিকাংশ সময়ই যিনি কাটিয়েছেন জয়সলমীরের কুলধারা নামে এক জায়গায়। তেরোশো শতাব্দীর এক জনপদ। যা বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত। অনেকেই বলেন, ভূতুড়ে গ্রাম। ভূত সত্যিই আছে কিনা, তা জানা নেই। প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বিশেষ করে সেই সব দেশি-বিদেশি পর্যটকদের, যাঁরা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। তেমনই মারিনা নামে অস্ট্রেলীয় (Australia) এক তরুণী ১৯৭০ সালে এসেছিলেন কুলধারা ঘুরতে। তখন সেখানে দারোয়ানের কাজ করতেন আজকের ৮২ বছরের বৃদ্ধ। কালক্রমে সেখানকারই বাসিন্দা হয়ে গেছেন তিনি। হ্যাঁ, স্থানীয়রা যাকে ভূতুড়ে গ্রাম বলে, সেই গ্রামের একমাত্র বাসিন্দা।

৫ দিনের জন্য রাজস্থান ঘুরতে আসা মারিনাকে উটে চড়তে শিখিয়েছিলেন তৎকালীন তরুণ দারোয়ান। কথায় বলে না, প্রথম দেখাতেই ভাললাগা। এবং ভালবাসাও। ওঁদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। ওই ক’টা দিন মারিনার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলেন তরুণ দারোয়ান। বছর তিরিশের দুই তরুণ-তরুণীর বন্ধুত্ব জমে গিয়েছিল দারুণ। চনমনে, হাসিখুশি মারিনাকে ভালবেসে ফেললেও মুখ ফুটে সে কথা বলতে পারেননি তিনি। কিন্তু শেষদিন মারিনাই তাঁর হাত ধরে বলেছিলেন, “আমি তোমাকে ভালবাসি।” মনের কথা প্রিয়তমার মুখে শুনে লজ্জা পেয়েছিলেন। ভোলেননি সম্মতি জানাতে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

আরও পড়ুন: এপ্রিল মাসে ১৫ দিন বন্ধ ব্যাঙ্ক , দেখে নিন পুরো ছুটির লিস্ট

এর পর লুনি নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। মারিনা অস্ট্রেলিয়া ফেরার পর বছর দুয়েক যোগাযোগ ছিল চিঠির মাধ্যমে। মারিনা তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে অনুরোধ করেছিলেন। ফেলতে পারেননি প্রেমিকার কথা। পরিবারকে লুকিয়ে ৩০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন। ছিলেনও তিন মাস মতো। সেসময় মারিনা তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। অনুরোধ করেন, অস্ট্রেলিয়াতেই পাকাপাকি থেকে যাওয়ার। কিন্তু প্রেমিকার অনুরোধ রাখতে পারেননি বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মার কথা ভেবে। বান্ধবীকে বুঝিয়ে ফিরে আসেন ভারতে।

এর পরে পরিবারের চাপে বিয়ে করেন। আবারও কুলধারাতেই দারোয়ানের কাজ জুটিয়ে নেন। দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। সংসারের, পরিবারের সব দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করেছেন। বছর দুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন স্ত্রী। ছেলেরাও বড় হয়ে কাজে ব্যস্ত। তাদের নিজেদের সংসার হয়েছে। ক্রমেই একাকিত্ব গ্রাস করছিল ৮২ বছরের বৃদ্ধকে।

এর মধ্যেই মাস দু’য়েক আগে একটি চিঠি পান। তা হাতে নিয়েই চমকে ওঠেন বৃদ্ধ। চিঠি এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। মনটাও হঠাৎ আনন্দে ভরে ওঠে তাঁর। হ্যাঁ, ঠিক যা ভেবেছিলেন তাই। মারিনার চিঠি। অস্ট্রেলিয়া থেকে সে লিখেছে, “কেমন আছ তুমি? অনেক কষ্টে তোমাকে খুঁজে পেলাম। আর যোগাযোগ হারাতে চাই না।” না, বৃদ্ধ আর যোগাযোগ নষ্ট হতে দেননি। এখন প্রতিদিন ফোনেই দীর্ঘসময় কথা বলেন দু’জন। ফেলে আসা জীবনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা। যদিও মারিনা কখনো বিয়ে করেনি বলেই জানিয়েছেন চিঠিতে। বৃদ্ধ দারোয়ান বলেছেন, “নিজেকে এখন একুশের তরুণ মনে হয়। প্রতিদিন আমরা গল্প করি। মারিনা আবার আমাকে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জুগিয়েছে।”

আরও পড়ুন: OMG! আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ, তপ্ত লাভায় হটডগ-স্যান্ডউইচ-অমলেট তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest