শুক্রবার সন্ধ্যায় কেরলের কোঝিকোড় বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে পিছলে গিয়ে দু’টুকরো হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানটি৷ মৃত্যু হয় দুই পাইলট সহ ১৮ জনের৷ নিহত দুই বিমানচালক হলেন উইং কমান্ডার দীপক বসন্ত শাঠে এবং ক্যাপ্টেন অখিলেশ কুমার৷ এর মধ্যে উইং কমান্ডার দীপক বসন্ত একসময় ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানও চালিয়েছেন। সার্ভিস রেকর্ড থেকে জানা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি ওড়ানোর আগে তিনি এয়ার ইন্ডিয়ারও বেশ কয়েকটি বিমানেও পাইলট হিসাবে কাজ করেছেন। ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমির প্রাক্তন এই ছাত্রের কাছে তাই বোয়িং ৭৩৭ বিমান ওড়ানো একেবারে জলভাত ছিল। কিন্তু তবু ঘটে গেল দুর্ঘটনা।
কোঝিকোড়ের কারিপুর বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল সন্ধে ৭টা বেজে ২৭ মিনিটে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমানটির অবতরণে সমস্যা হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার ২৪ জানাচ্ছে, দু’বার নামতে গিয়েও ব্যর্থ হয় বিমানটি। ফলে আকাশে বেশ কিছুক্ষণ চক্কর কাটে সেটি। সে সময়ই পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করেছিলেন দীপক। অতি কম দৃশ্যমানতার মধ্যে ১৩ বছরের পুরনো বোয়িং ৭৩৭-৮ নিয়ে অবতরণের মুখে তাই বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। ফলে প্রবল বৃষ্টিতে ছোট্ট ‘টেবিলটপ রানওয়ে’ থেকে পিছলে খাদে পড়ে দু’টুকরো হলেও বিমানে বিস্ফোরণ ঘটেনি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পেও ক্ষতি হবে না অযোধ্যার রাম মন্দিরের, টিকে থাকবে ১০০০ বছর
দীপক ও অখিলেশ বেশ কিছুক্ষণ আকাশে চক্কর কেটে বিমানের জ্বালানিও কমিয়ে এনেছিলেন। ফলে কোঝিকোড় বিমান দুর্ঘটনায় আগুন এবং বড় প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি (এনডিএ) এবং হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমির প্রাক্তনী দীপক দীর্ঘ ২২ বছর বায়ুসেনায় নানা ধরনের বিমান চালিয়েছেন। বেঙ্গালুরুর হ্যাল (হিন্দুস্থান অ্যারোনটিস লিমিটেড)-এও পাইলটের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ফলে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলার প্রশিক্ষণ তাঁর ছিল। শুক্রবার রাতে তাঁর সময়োচিত প্রয়োগেই বেঁচেছে অনেকগুলি প্রাণ।
বায়ুসেনা থেকে অবসরের পরে কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৩৭ বিমান চালানো শুরু করেছিলেন দীপক। রানওয়ে দৈর্ঘ্যে ছোট হওয়ার কারণে বোয়িং ৭৭৭ এবং এয়ারবাস এ৩৩০-এর মতো বড় বিমান যে কোঝিকোড় বিমানবন্দর ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে, সে কথাও অজানা ছিল না তাঁর। বিপদ জেনেও যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল ভূষণ গোখলে শনিবার জানান, এনডিএ-র ৫৮ নম্বর ব্যাচে ছিলেন তাঁরা। ১৯৮১-ক জুনে প্রশিক্ষণের শেষে ‘সোর্ড অফ অনার’ সম্মান জিতে নিয়েছিলেন দীপক।
আরও পড়ুন: করোনাকালে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি, সম্পত্তির পরিমাণ জানলে ঘুরে যাবে মাথা