পৃথিবীর অন্যতম নিষ্পাপ সম্পর্কের একটি হল ‘বন্ধুত্ব’। একে অন্যকে আপন করে নেওয়ার নামই বন্ধুত্ব। তবে একে অন্যের সুখে-খুশিতে লাফিয়ে ওঠার; একে অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর। মন খুলে কথা বলা, হেসে গড়াগড়ি খাওয়া আর চূড়ান্ত পাগলামি করার একমাত্র আধার এই ‘বন্ধুত্ব’।
এই বছর করোনার প্রকোপে সকলেই বন্দি। অনেকেই পরিবার স্বজন থেকে দূরে। কেউ দেশের মধ্যে, কেউ আবার দেশের বাইরে। কবে নিজের বাড়ি ফিরতে পারবেন, কবেই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা জানেন না কেউই। তাই যোগাযোগের ভরসা এখন ফোন, ভিডিয়ো কল। কিন্তু তাতে ক্ষতি নেই। বন্ধুত্ব এমন একটি বন্ধন, এতে থাকে স্বার্থহীন ভালোবাসা।তবে সব কিছুই শুরু হওয়ার পেছনে একটা ইতিহাস থাকে। তেমন ইতিহাস আছে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ পালন করার পেছনেও। কোন সময় থেকে, কেনই বা একটা দিনকে শুধুমাত্র বন্ধুদের জন্য বলে ভাবা হল আসুন তা দেখে নেওয়া যাক।
ফ্রেন্ডশিপ ডে’র সালতামামি
মানব সভ্যতার ইতিহাসে কবে যে প্রথম বন্ধুত্বকে উদযাপন করা শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। তবে বছরের বিশেষ একটা দিনে বন্ধুর বাড়িতে সবথেকে ভালো রুটি ও পানীয় পাঠানোর কথা আমরা যীশুখ্রিস্টের সময়তেও পাই। তবে সেই দিনটাকে কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ ডে কোনোদিনই বলা হয়নি। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতেও আলাদা করে বন্ধুত্বের দিন উদযাপনের কিছু কাহিনী পাই, যেখানে দেখি বন্ধু পাবার আশায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে। তবে প্রথম ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ পালন করার কথা মাথায় এসেছিল বোধহয় হলমার্ক কার্ড নির্মাতা জয়েস হলের মাথা থেকে।
আরও পড়ুন: World Environment Day 2020: জীববৈচিত্রে ভরে উঠুক পৃথিবী, জানুন বিশেষ দিনটির গুরুত্ব, দেখুন ভিডিও…
সালটা ১৯১৯, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে, গোটা পৃথিবী জুড়ে তখন এক জঘন্য আবহ। ‘হল’ ঠিক সেইসময়ই ঘোষণা করলেন অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার ফ্রেন্ডশিপ ডে পালনের কথা। কার্ড, উপহার বিনিময় হল, যুদ্ধের ওই থমথমে পরিবেশে শুরু হল ফ্রেন্ডশিপ ডে’র জয়যাত্রা! ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেসে স্বীকৃতি দেওয়া হল দিনটাকে। ১৯৫৮ সালে প্রথম প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হল ‘ইন্টারন্যাশানাল ফ্রেন্ডশিপ ডে’। সেই শুরু। তারপর যত দিন গেছে নতুন মাত্রা পেয়েছে দিনটা ক্রমাগত। কিন্তু তার মূল বিষয়টা এখন একই রকম থেকে গেছে—তা হল বন্ধুকে মনে করা, তাকে নানা উপহার দেওয়া।
অন্য একটি ঘটনাও শোনা যায়। ১৯৩৫ সালে আমেরিকার সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। তার প্রতিবাদে পরের দিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। এরপরই জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষ্যেই আমেরিকান কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালে আগস্টের প্রথম রোববারকে বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
বন্ধুত্ব দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে পালন করা হয়। বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবসের প্রস্তাব করেন ডঃ আর্টেমিও ব্র্যাচো, ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই। ২৭ এপ্রিল ২০১১ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাইকে অফিসিয়াল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে ঘোষিত হয়।
বন্ধুত্বের চিহ্ন
প্রিয় বন্ধু যাতে আমাকে মনে রাখে সেকথা ভেবে তাকে নানা উপহার দেওয়ার রেওয়াজ আজও আছে। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে বন্ধুকে দেবার জন্য যে জিনিসটি চল সবথেকে বেশী, তা হল—ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, যাকে বলা যেতে পারে বন্ধুত্বের স্মারক। বন্ধুর হাতে বেঁধে দেওয়া হয় সেটি। অনেকটা প্রায় আমাদের রাখিরই মতো। কেন এই বিশেষ ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড?
ব্যান্ডগুলো খেয়াল করলে দেখবেন ওগুলো কিন্তু বিশেষ বিনুনি করার সুতোর নকশায় তৈরি। এই নকশার প্রচলন আদতে ছিল আমেরিকার আদিম জনজাতিগুলোর মধ্যে। নিজের হাতে নকশাওয়ালা ব্যান্ড তৈরি করে প্রিয় বন্ধুকে পরাতো ওরা। সেই থেকেই এসেছে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণা। ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড নিজে থেকে খুলে ফেলা মানে যে আড়ি করা, আমেরিকার ওই আদিম জনজাতির মানুষগুলোর মতো আজও আমরা একথায় বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি ওই ব্যান্ডের মধ্যে বন্ধু আসলে তার ইচ্ছাকে পুরে দেয়।
এই বছর করোনার কোপে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আনন্দ করা বা ভালো করে গোটা দিনটা কাটান এই বছর হবে না। চারিদিকে করোনার আতঙ্ক থাবা বসিয়েছে। মন খারাপের বছর ২০২০। ঘরবন্দি জীবনে আমাদের একমাত্র ভরসা ডিজিটাল মাধ্যম।তাই বন্ধুদের সঙ্গে গল্প সেরে নিন ভিডিও কলে আর তারপর দেখে নিন মন ভালো করা এই সিনেমা গুলি-
লাইফস্টাইল সংক্রান্ত সব আপডেট এখন টেলিগ্রামে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন এখানে। https://t.me/thenewsnest
আরও পড়ুন: #lipstickday: ঘরবন্দি থাকার জেরে মনখারাপ? বিষন্নতা ঝেড়ে ফেলে ঝিলিমিলিয়ে উঠুন লিপস্টিকের রঙে