মিস ইউনিভার্স ২০১৯ এ স্টিভ হার্ভের ভুল বিজেতার নাম ঘোষনা নিয়ে বানানো মিম এখনও চোখে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে, মিসেস শ্রীলঙ্কা ২০২১-র ফাইনালে যা ঘটল তা বোধহয় কল্পনার অতীত! বিজয়ীর নাম ঘোযণা হয়ে মাথায় মুকুট পরিয়ে দেওয়ার পর তা একপ্রকার ছিনিয়ে নেওয়া হল। পরানো হল ফার্স্ট রানার আপকে। তারপর? সেই মুকুট ফের উঠল প্রথম বিজয়ীর মাথাতেই।
ব্যাপারটা একটু খোলসা করেই বলা যাক। রবিবার কলম্বোর নীলম পোকুনা মহিন্দা রাজাপক্ষ থিয়েটারে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ের ফলাফল ঘোষণা হয়। তাতে ২০২০-’২১ বর্ষের বিজয়িনী ঘোষিত হন ৩১ বছরের পুষ্পিকা ডি সিলভা। নাম ঘোষণা হওয়ার পর নিয়মমাফিক পুষ্পিকার মাথায় মুকুটও ওঠে। নিজে হাতে তা পুষ্পিকার মাথায় তুলে দেন ২০১৯-’২০ বর্ষের বিজয়িনী ক্যারোলিন জুরি। তার পর মাইক হাতে বক্তৃতা করার সময় পুষ্পিকাকে আক্রমণ করতে শুরু করেন তিনি।
হাজার হাজার দর্শক এবং টিভিতে চোখ রাখা দেশের মানুষের উদ্দেশে তিনি ঘোষণা করেন যে, পুষ্পিকা ওই মুকুটের যোগ্য নন। কারণ এই প্রতিযোগিতা বিবাহিত মহিলাদের জন্য। স্বামী-সংসারের মধ্যে থেকে, সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও যাঁরা অনন্য হয়ে উঠেছেন, তাঁরাই প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর যোগ্য। পুষ্পিকার বিয়ে হলেও বিচ্ছেদ ঘটে গিয়েছে। ক্যারোলিনের দাবি, এই কারণে সেরার শিরোপা পাওয়ার যোগ্য নন তিনি।
এর পরেই কার্যত চুলোচুলি শুরু করে দেন ক্যারোলিনা। মাইক রেখে পুষ্পিকার দিকে এগিয়ে যান তিনি। পুষ্পিকার মাথার মুকুট ধরে টানাটানি শুরু করে দেন। চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে শেষমেশ মুকুটটি পুষ্পিকার মাথা থেকে খুলে নেন তিনি। তার পর সকলকে অবাক করে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর মাথায় মুকুট তুলে দেন।
গোটা ঘটনায় অপমানিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান পুষ্পিকা। তবে সাময়িক ভাবে চলে গেলেও, পরে নেটমাধ্যমে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। জানান, আইনত বিচ্ছেদ না হলেও, স্বামীর থেকে আলাদা থাকেন তিনি। একাই সন্তানকে বড় করছেন। তার জন্য যদি তাঁকে প্রতিযোগিতার যোগ্য মনে না করা হয়, কোনও আফশোস নেই তাঁর।
আরও পড়ুন: এপ্রিল মাসে ১৫ দিন বন্ধ ব্যাঙ্ক , দেখে নিন পুরো ছুটির লিস্ট
এর পরই, বিষয়টি নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন নেটাগরিকরা। অন্যান্য দেশেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। তাতে নড়েচড়ে বসেন উদ্যোক্তারা। দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর থেকে মুকুট পুষ্পিকাকে ফেরত দেন তাঁরা। বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, গোটা ঘটনায় পুষ্পিকার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।
এর পর, হৃত মুকুট পরিহিতা পুষ্পিকাকে নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেন উদ্যোক্তারা। সেখানে সরাসরি কারও নাম না করা হলেও, বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়ে দেন পুষ্পিকা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখনও আইনি বিচ্ছেদ হয়নি আমার। তবে যিনি অন্যের মাথা থেকে মুকুট কেড়ে নেন, তিনি অনন্যা হওয়ার যোগ্য নন। আমি বিবাহিতা নাকি বিবাহ বিচ্ছিন্না, সেটা আমার পরিচয় নয়।’’
পুষ্পিকা আরও বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তা ছাড়া বিবাহিত মহিলারা কী এমন অতিরিক্ত সম্পদের অধিকারী যে বিবাহ বিচ্ছিন্নারা তাঁর সমকক্ষ নন? এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চাই আমি। আমি চাই ভবিষ্যতে বিবাহ বিচ্ছিন্নারাও যেন এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন।’’
আরও পড়ুন: ভালোবাসা করে কয়…পাঁচ দশক পেরিয়ে বিদেশিনী প্রেমিকাকে ফিরে পেলেন রাজস্থানের বৃদ্ধ