Site icon The News Nest

‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান’…প্রয়াণ দিবসে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য

বাঙালি সুখে-দুঃখে বারবার ফিরে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছেই। বাঙালির এমন কোনো অনুভূতি নেই, যার প্রকাশ ঘটেনি ক্ষণজন্মা এই বাঙালির সৃজনকর্মে। বিশ্বজুড়ে যখন করোনার মহামারি চলছে, তখনো প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথ। জীবদ্দশায় তিনি প্লেগ, ম্যালেরিয়া প্রভৃতির বীভৎস রূপ দেখেছেন। প্লেগ সচেতনতায় রাস্তায় নেমেছিলেন। যুক্ত হয়েছিলেন হাসপাতাল নির্মাণকাজে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এবার পালিত হবে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী। আজ বৃহস্পতিবার, ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর ৭৯তম প্রয়াণ দিবস।

১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ৮০ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ পরলোকগমন করেন। হাজার হাজার ভক্তের অশ্রু ঝরেছিল তাঁর প্রয়াণে। ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্তকমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’ ভানুসিংহের পদাবলীতে মৃত্যকে এভাবেই বন্দনা করে গিয়েছিলেন তিনি। কাব্য সাহিত্যের বিশাল একটি অংশে রবীন্দ্রনাথ যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এ দিন।

মৃত্যুকে তিনি একাধিকবার সামনে থেকে দেখেছেন। চোখের সামনে এক এক করে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। কবির জীবনেও বাইশে শ্রাবণ একটি মৃত্যুর দিন। কবির সবচেয়ে প্রিয় দৌহিত্র নীতিন্দ্রনাথের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ এসেছিল এই বাইশে শ্রাবণের দিনে। তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্তও প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা থেমে থাকেনি। বিয়ের পর চার মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই তার নতুন বৌঠান, জ্যোতিরিন্দ্র নাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। মৃত্যু এসে আর একজনের শিয়রে দাঁড়ায়। মাত্র আটাশ বছর বয়সে কবি পত্নীরও মৃত্যু হয়। তার আগে প্রথম সন্তান বেলার জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে। তারপর সেজো মেয়ে রেনু এবং ছোট মেয়ে মীরা। ১৯০১ সালে বড় মেয়ে বেলার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পরেই বেলার মৃত্যু হয়।

শান্তিনিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। ৩০ জুলাই ১৯৪১, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হয়। তার কিছু পূর্বে তিনি শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।’ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করে নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত সংকটজনক হে শুরু করে। জ্ঞান হারান। শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন রাখীপূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে- বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ, ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট।

কবি চেয়েছিলেন, তাঁর শ্রাদ্ধ হবে শান্তিনিকেতনে ছাতিমগাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায়। কথা রেখেছিল শান্তিনিকেতন। কবির মৃত্যুকে শোকসভা করে নয়, বরং নতুন প্রাণের আবাহনের মধ্য দিয়েই তাঁকে চির অমর করে রেখেছে। ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ থেকেই বাইশে শ্রাবণ দিনটি বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে শান্তিনিকেতন। নিজের জীবনকালেই কবি বহুবার পালন করেছেন বৃক্ষরোপণ উৎসব। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ উত্তরায়ণে নিজের হাতে পঞ্চবটী (বট, অশ্বত্থ, অশোক, বেল, আমলকি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই বৃক্ষরোপণের দিনটিই স্থির হয়ে গেল বাইশে শ্রাবণ তারিখে।

রবীন্দ্র স্মরণের এই উৎসবে আজ কোনো শিল্পীর কণ্ঠে উৎসারিত হবে হয়তো অমিয় সুরের ধারা, যেখানে ধ্বনিত হবে, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা…’।

 

Exit mobile version