দীর্ঘ দশ বছর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে কুর্শি সামলেছেন। দেশের অন্যতম সেরা ও সর্বকালীন যোগ্যতম অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথমেই আসে অমিত মিত্রের নাম। কয়েকদিন আগেই তৃতীয়বারের জন্যে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী পদে ইনিংসের সূচনা করেছিলেন অমিত মিত্র। তবে অমিতবাবুর তৃতীয় ইনিংস দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে হয় না। সূত্রের খবর, শারীরিক কারণে দীর্ঘ দশ বছর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে থাকার পর মন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন অমিত মিত্র। জানা গিয়েছে, নভেম্বরে ছয় মাসের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সরে দাঁড়াবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন অমিত মিত্র।
নিঃসন্দেহে গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অমিতবাবুর এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া নয়। একুশের ভোটে তিনি লড়েননি। তখনই দলনেত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর পক্ষে অর্থমন্ত্রী থাকাও আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দল ভোটে জেতার পর মমতা তাঁকে বলেন, ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের’ দিন থেকে অমিত মিত্র তৃণমূল সরকারের সঙ্গী। ফলে একুশের জয়ের পর অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বে অন্তত ছ’মাসের জন্য তিনি থাকুন। তার পর পরবর্তী পরিস্থিতির কথা ভাবা যাবে। প্রসঙ্গত, বিধানসভায় নির্বাচিত না হয়েও ছ’মাস মন্ত্রী থাকা যায়। সে ভাবেই অর্থ দফতরের দায়িত্ব এখন সামলাচ্ছেন অমিতবাবু।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, অমিতবাবুর শূন্যস্থান পূর্ণ করবেন কে? নবান্ন শীর্ষ সূত্রের খবর, সে ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই দফতরটি রাখতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁর নিজের জিতে আসা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলে থাকবে। উপনির্বাচন যদি ছ’মাসের মধ্যে না হয়, তা হলে আবার পুরো বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে সূত্রের খবর, অমিতবাবু নিজে মন্ত্রী না থাকলেও তাঁকে অর্থ দফতরের উপদেষ্টা পদে রাখা যায় কি না, তা মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। অভিজ্ঞ অফিসারদের নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি একটি মঞ্চ রাখা হবে অর্থনীতিবিদদের মতামত, পরামর্শ নেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: যিনি বাংলাকে টুকরো করার কথা বলেছেন, তাকেই মন্ত্রী করা হল- বারলা প্রসঙ্গে কটাক্ষ মহুয়ার
করোনার অতিমারীর ধাক্কার সঙ্গে রয়েছে করের বোঝা ও ঋণ, রয়েছে একাধিক জনমুখী প্রকল্প। তাই রাজ্যের অর্থের চাকা ঘোরাতে যোগ্য কাউকে না পেলে চাপ বাড়বে আগামীদিনে। অমিত মিত্র শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন জিএসটি পরিষদে সমস্ত রাজ্যের হয়ে দর কষাকষিতেও। তাই ক্ষতি একটা হবেই যার পূরণ করার মতো এখনই নেউ কেউ। অমিত্র মিত্রকে পুনরায় অর্থমন্ত্রীর করার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তা ছিল, খড়দহে তাঁর আসনে দাঁড়ানো কাজল সিনহার করোনায় মৃত্যু। উপ নির্বাচনে একটা বা দুটো জনসভা করে দলের উপর বাকিটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু অমিত্র মিত্র আর কোনওমতেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এই কাজ করতে চাইছেন না। বিধানসভায় তড়িঘড়ি বিধান পরিষদের প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তাতে অমিত মিত্র সদস্য হলে অনায়াসে ভোটে না জিতে মন্ত্রী হতে পারতেন তাও আটকে রয়েছে।
অমিত মিত্র জানিয়েছেন, মন্ত্রিত্বের দৈনন্দিন চাপ নেওয়ার মতো তাঁর শরীরের অবস্থা নয়। গত ৭ জুলাই তিনি নিজে বাজেট পেশ করতেও পারেননি। তাঁর তৈরি করে দেওয়া বাজেট পেশ করেছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্য সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অতএব তৃতীয়বারে ক্ষমতায় এলেও অমিত মিত্রকে ছাড়াই অর্থ দফতর চালাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
আরও পড়ুন: ২১ জুলাই থেকে দৈনিক হচ্ছে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’