দিল্লি গেলেন না মুখ্যসচিব, আলাপনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পথে কেন্দ্র

কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকের সময় মুখ্যসচিব আলাপনের ‘আচরণ’-এর কারণেই তাঁকে দিল্লিতে বদলির সিদ্ধান্ত বলে অসমর্থিক সূত্রের খবর।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনর কথা ছিল। কিন্তু তিনি দিল্লি যাননি। বদলে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে। তার পরেই তাঁ বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই পদক্ষেপের পর আরও তীব্র হল কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত। আরও স্পষ্ট করে বললে মোদী-মমতা সঙ্ঘাত। কারণ, আলাপন যে দফতরের আইএএস, সেই কর্মিবর্গ দফতর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন।

শুক্রবার রাজ্যকে এক চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়। তাতে নির্দেশ হওয়া হয়, সোমবার সকাল ১০টায় আলাপনকে দিল্লিতে নর্থ ব্লকের কর্মী ও প্রশিক্ষণ বিভাগে হাজিরা দিতে হবে। এই নির্দেশকে ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। উল্লেখ্য, নিয়ম অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার ডেপুটেশনে ডাকলেও রাজ্য যদি অফিসারকে না ছাড়ে, তাহলে তিনি দিল্লি গিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে পারেন না।

এদিকে মুখ্যসচিবকে যে ছাড়া হচ্ছে না, তা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাঁচ পাতার চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন আলাপনের বদলির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত, পাঁচ পাতার এই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন কেন এই মুহূর্তে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের দরকার। মমতার দাবি, সেক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু সেই আর্জি যে কেন্দ্র মানছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই। যখন কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, আলাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Alapon Bandopadhyay: মুখ্যসচিব আলাপনকে দিল্লিতে তলব, ৩১ মে কাজে যোগ দেওয়ার জরুরি নির্দেশ কেন্দ্রের

এদিকে সোমবার আলাপন নিজে কী করবেন, সেদিকেই চোখ ছিল সব মহলের। এদিন স্বাভাবিক দিনের মতোই নবান্নে পৌঁছে যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে রবিবার ছুটির দিনে, স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তীকে নিয়ে নবান্নে তিন ঘণ্টা কাটিয়ে এসেছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এদিন মু্খ্যমন্ত্রীর ডাকা ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় থাকবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকের সময় মুখ্যসচিব আলাপনের ‘আচরণ’-এর কারণেই তাঁকে দিল্লিতে বদলির সিদ্ধান্ত বলে অসমর্থিক সূত্রের খবর। কারণ, আলাপনকে বদলির কোনও সরকারি কারণ জানানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের খবর, আলাপন ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে না থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলে গিয়ে ‘প্রটোকল’ ভেঙেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে ইয়াসের জেরে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে এসে গত শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানবন্দরে পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী এবং আলাপনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করলেও দু’জনই দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে চলে আসেন। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আলাপনকে দিল্লিতে বদলির চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। অর্থাৎ, কলাইকুন্ডার বৈঠকে না থাকাটাই এই বদলির সম্ভাব্য কারণ।

প্রটোকল সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এলে সেখানে রাজ্যপুলিশের ডিজিকে পুরোদস্তুর উর্দি পরিহিত অবস্থায় হাজির থাকতে হয়। তেমনই মুখ্যসচিবকেও থাকতে হয় সরকারি পোশাক ‘বন্‌ধ-গলা’ পরিহিত অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী রাজ্য ছাড়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানে থাকতে হয়। অন্তত প্রটোকল তেমনই বলে। কিন্তু আলাপন সেদিন ওই পোশাকে ছিলেন না। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, তিনি শেষপর্যন্ত মোদীর বৈঠকে থাকতেন না। সেদিন সকাল থেকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ইয়াস-দুর্গত এলাকা খতিয়ে দেখছিলেন। ফলে যৌক্তিক ভাবেই আশা করা যা, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সফর শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই থাকবেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলা হিসেবে। অথবা, মুখ্যমন্ত্রীও চাইবেন তিনি সঙ্গে থাকুন।

তবে এরই পাশাপাশি আলাপনের পক্ষেও অভিমত উঠে আসছে। যা তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগকে খানিকটা হলেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে। প্রটোকলের সঙ্গে জড়িতরা সেই বিষয়টি বলতে শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বিমান অবতরণ করেছিল কলাইকুন্ডায়। যেটি আদতে বায়ুসেনার একটি বিমানঘাঁটি। সাধারণ কোনও বিমানবন্দর নয়। বলা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের প্রটোকল খাটে না। আপৎকালীন কোনও পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। যা সাধারণ প্রশাসনের পরিসরের অন্তর্ভূক্ত নয়। সে কারণেই সেখানে সাধারণ প্রশাসনিক প্রটোকল খাটে না। তা ছাড়া, আলাপনকে বদলি করার আগে রাজ্যের অনুমতিও প্রয়োজন ছিল। বা রাজ্যের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ছিল। তা-ও করা হয়নি।

আরও পড়ুন: মোদীকে পাঁচ পৃষ্ঠার কড়া চিঠি মমতার, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আলাপনকে ছাড়া যাবে না

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest