পুজোর আগে সুখবর বাঙালির জন্য। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে বিশেষ স্বীকৃতি দিল কেন্দ্র। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহুদিন ধরেই কেন্দ্রের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিল রাজ্য সরকার। বহুদিনের চেষ্টার পর এদিন তার ফল মিলল হাতেনাতে।
বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এই স্বীকৃতির পরে একঝাঁক সুবিধা মিলবে বাংলা ভাষার জন্য। বাংলা ভাষার বিশেষজ্ঞদের জন্য দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এছাড়াও সেন্টার ফর এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা করে বিশেষভাবে পড়ানো হবে বাংলা ভাষা। প্রত্যেক কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার প্রচারও হবে।
ধ্রুপদী ভাষা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ২০০৪-এ। তৎকালীন বিজেপি সরকার সংস্কৃতের সঙ্গে তামিল, তেলুগু, ও মালয়ালমকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে তালিকা ভুক্ত করে। তখনই তৎকালীন রাজ্য সরকার বাংলাকে উপেক্ষা করার অভিযোগ জানিয়ে দিল্লিকে চিঠি দেয়। কিন্তু বিতর্ক তখন বেশি দূর গড়ায়নি। পরবর্তী সময়ে ওড়িয়াকেও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।
বাংলার প্রাচীন পুঁথি এবং অন্যান্য লেখা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রাচীন গ্রন্থগুলো ডিজিটাল করা হবে। আরও বেশি করে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং প্রকাশনা হবে এই স্বীকৃতির ফলে। কেবলমাত্র বাংলা ভাষার চর্চা করতে তৈরি হবে বিশেষ গবেষণা কেন্দ্র। বাংলা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় গেলে বৃত্তি পাবেন পড়ুয়ারা।
বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের নয়া শিক্ষা নীতি ঘিরে। ২০২০ সালে তাতে বলা হয়, সংস্কৃত, ওড়িয়া, তেলুগু, তামিল, কন্নড়, এবং মালায়লাম ভাষায় যে কোনও রাজ্যেই পড়াশুনো করা যাবে। তাতে বাংলার স্থান না হওয়ায় জোরালো আপত্তি তোলা হয়। ধ্রুপদী ভাষার মানদণ্ড ঠিক করা হয়, সংশ্লিষ্ট ভাষাকে দেড় হাজার বছরের পুরনো এবং আদি ও আধুনিক ভাষার ভাষারূপের ফারাক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নত সাহিত্য ভাণ্ডার থাকতে হবে। মোদী সরকারের বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা সেই পর্যায়ে পড়ে না।
এরপর থেকেই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া নিয়ে বহুদিন ধরে লড়ে চলেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। পাতার পর পাতা গবেষণার কাজ কেন্দ্রের দরবারে জমা দেওয়া হয়েছে। তার পরও বাংলার মতো সমৃদ্ধ, সৃষ্টিকর্মের ভাষা ধ্রুপদী জগতে ঠাঁই পায়নি। অনেকেই এনিয়ে বার বার মুখর হয়েছেন। এতেও বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ করা হয়েছে। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে বাংলা ভাষার।