ঊনিশে হাফ, একুশে সাফ- স্লোগান তুলে কুরুক্ষেত্রে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু একুশের মহাসংগ্রামে বিপর্যয় হয়েছে বাংলার গেরুয়া শিবিরের। তারপর দলে শুধু কোন্দল আর ভাঙন। একের পর এক বিজেপি নেতা, বিধায়ক, সাংসদ দল ছাড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪-এর রণনীতি স্থির করে ফেলল বিজেপি। তৈরি হল ২৪-এর নয়া স্লোগান।
শনিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরি হলে দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটির তরফে সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষের সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই দুই শীর্ষ নেতাই কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে দলের কঠোর অনুশাসনের বার্তা দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “বিজেপি ব্যক্তি নয়, নীতি নির্ভর দল। গঙ্গা প্রবাহমান। ময়লা জলে ভেসে চলে যাবে। যারা নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন। ভোটে পরাজয়ের পর তাদের যদি এত ভয় থাকে। অন্য পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বলতে ভয় পান। তাহলে বিজেপি করতে হবে না। বিজেপি (BJP) ছেড়ে দিন। না হলে যত বড় নেতাই হোন না কেন, দল তাদের তাড়িয়ে দেবে।”
“আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমাদের অন্তত ২৫টি আসন জিততে হবে। এখন থেকে স্লোগান দিতে শুরু করুন, এ বার ২৫ পার। এই মন্ত্র জপ করুন। মন্ত্র যত বলবেন, তত সিদ্ধিলাভ নিশ্চিত হবে।” এর সঙ্গে সুকান্ত এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের আহ্বান, লোকসভায় ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে গেলে এখন কর্পোরেশনও জিততে হবে। দিলীপের ব্যাখ্যা, “কলকাতা-সহ যে সব পুরসভায় ভোট আসন্ন, সেগুলিতে আমাদের জিততে হবে। কারণ স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে না জিতলে বিধায়ক, সাংসদ জেতা যায় না। জিতলেও ধরে রাখা যায় না। যেমন বহু বছর আগে তপন সিকদার এবং জলু মুখোপাধ্যায় (সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়) দমদম এবং কৃষ্ণনগর লোকসভায় জিতে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সেই ফল ধরে রাখতে পারিনি। কারণ বুথে সংগঠন ছিল না। আর সেটা না থাকলে স্থানীয় ভোটে জেতা যায় না।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চলতি বছরের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে বিজেপির হাতে এখন গোটা দশেকের বেশি লোকসভা আসন নেই! কারণ, বিজেপি ৭৭টি বিধানসভা আসনে জিতলেও তাদের দুই বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন এবং আরও পাঁচ বিধায়ক দল ছেড়ে শাসক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
তৃণমূল অবশ্য সুকান্তর লোকসভা এবং দিলীপের বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যমাত্রাকে রসিকতার বিষয় বলে মনে করছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “স্বপ্নে যখন পোলাও খাবেন, ঘি কম দেবেন কেন? আগে গোয়া, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি সামলান। পরে নবান্নের কথা ভাববেন।”