ভোট পরবর্তী অশান্তি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের তদারকিতেই তদন্ত করবে সিট অর্থাত্ স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট মেনে সিট গঠন করা হবে। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় বৃহস্পতিবার রায় দিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। এক্ষেত্রে অবশ্য রাজ্যের আইপিএসদের নিয়েই সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ইতিমধ্যেই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে এই রায়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকেই মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRCর রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে HC নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করছি না।”
তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় বলেন, “হাইকোর্ট যখন রায় দিয়েছে মানতে হবে। তবে সিবিআইকে তদন্ত করতে বলা মানে, রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। রাজ্য না মানলে, ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে বা সাংবিধানিক বেঞ্চে যেতে পারে বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। আমার বিশ্বাস রাজ্য সরকার সব ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে।”
HC order নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRCর রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে HC নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করছি না।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 19, 2021
আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ১
হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের টিম, তারা প্রায় ১৯০০-র বেশি অভিযোগে সারবত্তা খুঁজে পেয়েছিল। এর মধ্যে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ছিল, ৫২টি খুনের অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছে, এই ধরনের হেনিয়াস ক্রাইম বা জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত করবে সিবিআই। ফলে মনে করা হচ্ছে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকেই প্রাইমা ফেসিয়া হিসেবে মেনে নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ।
বাকি অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত হবে সিটের নেতৃত্বে। বলা হয়েছে এই তদন্ত চলবে হাইকোর্টের নজরদারিতে। অর্থাৎ হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা চলবে না। তিন আইপিএস আধিকারিক সুমন বালাসাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারকে সিট গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গাড়িভাঙা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-এর মতো যে অভিযোগগুলি তা খতিয়ে দেখে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন তারা। আগামী ৪ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর হামলার অভিযোগ তোলে রাজ্য বিজেপি। এরপর ভোট পরবর্তী হিংসা এবং অশান্তি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদারকে নিয়ে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ৷
আরও পড়ুন: অমানবিক Dhupguri : জাতীয় সড়কের কাছে কাতরাচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা, এগিয়ে এলেন না কেউ