Site icon The News Nest

জলে ডুবে ক্যানিং, হাঁড়িতে ভাসিয়ে শিশুকে পোলিয়ো টিকা খাওয়াতে নিয়ে এলেন নিজামুদ্দিন

polio scaled

কোথাও হাঁটু সমান জল আবার কোথাও কোমর সমান। ক্যানিং (Canning) ২ নম্বর ব্লকের সারেঙ্গাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহেশ্বর সাবসেন্টার জলের তলায়। তা বলে তো আর পোলিও টিকাকরণ (Polio Vaccine) বাদ দেওয়া যায় না? তাই তো হাঁড়িতে শুইয়ে জলে ভাসিয়ে পোলিও টিকা খাওয়াতে নিয়ে আসেন বাবা। হাঁড়ির ভিতরে শুয়ে থাকা শিশুকে পোলিও খাওয়ালেন আশাকর্মী। জলে ভিজে শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল।

ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের সারেঙ্গাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহেশ্বর সাবসেন্টার এলাকা জলের তলায়। আবার শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, ভাবলেই শিউরে উঠছেন বাসিন্দারা। জল যতই ঘিরে ধরুক, বাচ্চাদের পোলিয়ো খাওয়াতে দেরি করতে চাননি ব্যাগ তৈরির কারিগর নিজামুদ্দিন। নবজাতককে বড় মুখওয়ালা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে শুইয়ে জলে ভাসিয়ে পোলিয়ো টিকা খাওয়াতে নিয়ে গেলেন তিনি। সঙ্গীর কাঁধে চাপিয়ে আনলেন আড়াই বছর বয়সের বড় ছেলে শামিমকেও। বললেন, “বাচ্চা দু’টোকে পোলিয়ো তো খাওয়াতেই হবে। তাই এ ভাবেই পৌঁছে গেলাম।”

কোথাও কোমরসমান, কোথাও হাঁটুসমান জলে নেমে বাচ্চাদের পোলিয়ো টিকা খাওয়াতে খাওয়াতেই নিজামুদ্দিনদের এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন আশাকর্মী সোনালি প্রধান এবং এএনএম (২) নমিতা হালদার। তাঁরা ছিলেন একটু উঁচু মূল রাস্তায়। এর পরে যে-মাটির রাস্তা ধরে নিজামুদ্দিনের বাড়ির সামনে যেতে হবে, সেখানে প্রায় এক কোমর জল। আর ওই যুবকের বাড়ির সামনে জল বুকসমান। তাই ঝুঁকি নেননি সোনালি-নমিতারা। তাঁরা বললেন, “আমরা প্রায় হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে হাঁক দিলাম। কারণ তার পরে জল এত বেশি যে, পোলিয়ো বাক্স নিয়ে যাওয়া মুশকিল।”

সোনালি জানাচ্ছেন, আচমকাই তাঁর দেখেন, জলে ভাসানো একটি হাঁড়ি ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন নিজামুদ্দিন। পিছনে অন্য এক জনের কাঁধে তাঁর বড় ছেলে। সোনালি বলেন, “প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। পরে বুঝলাম, হাঁড়িতে করে একরত্তিটাকেই নিয়ে আসছে।” নমিতা জানান, শিশুকে ওই ভাবে আনতে দেখে তাঁরাও মূল রাস্তা থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে যান। নিজামুদ্দিনের কাছে জানতে চান, “হাঁড়িতে করে কেন?” বছর সাতাশের নীজামুদ্দিন তাঁদের জানান, স্ত্রী সাফিয়া খাতুনের জল ঠেলে আসার ক্ষমতা নেই। আবার তিনি নিজেও ১৫ দিন বয়সের ছেলেকে কোলে নিয়ে জল ঠেলে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। কোনও ভাবে খুদে যদি পড়ে যায়! তাই আশাকর্মীদের ডাক শুনেই বাড়িতে থাকা বড় মুখের হাঁড়িতে ছেলেকে কাঁথায় মুড়িয়ে শুইয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন নিজামুদ্দিন।

ক্যানিং-২ নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলবন্দি। সেই জল ভেঙেই এ দিন ১৭৬ জন আশাকর্মী মোট ১২,৬১২টি বাচ্চাকে পোলিয়ো খাইয়েছেন। একই হাল ক্যানিং-১ নম্বর ব্লকেরও। সেখানকার নবপল্লি এলাকায় এ দিন বাঁশের তৈরি ভেলায় চেপে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোলিয়ো খাওয়াতে দেখা গিয়েছে আর এক আশাকর্মী ফাল্গুনী মণ্ডলকে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ দিন জানান, সাধারণত মায়েরাই বাচ্চাদের পোলিয়ো খাওয়াতে নিয়ে আসেন। সেখানে এক জন বাবা দুর্যোগের মধ্যে এ ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এটা খুবই প্রশংসার। স্বাস্থ্য অধিকর্তা একই সঙ্গে বলেন, ‘‘দুর্যোগ ঠেলে, কোমরসমান জলে দাঁড়িয়ে আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে-ভাবে পোলিয়ো খাওয়ানোর কাজ করছেন, তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এঁদের জন্য গোটা স্বাস্থ্য দফতর গর্বিত।”

Exit mobile version