মেয়ের বিয়ের (Marriage) আচার-অনুষ্ঠানে ‘কন্যাদান’-এর মতো রীতি আজও চলছে। সময় বদলেছে। তাই কন্যাকে ‘দানসামগ্রী’র সঙ্গে তুলনা করার মতো প্রাচীন ধ্যানধারণা ফেলে আসার দিন আসন্ন। কিন্তু এতদিনকার লালিত সংস্কার ছেড়ে বেরনো কি এত সহজ? তাই তো একটু ভিন্ন ঘরানায় মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র (Invitation Card) লিখে বিতর্কের (Controversy) মুখে পড়লেন কনের বাবা। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের (Hindutwa) তরফে তাঁকে হুমকিও শুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মেয়ের বিয়ে। আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়ে গিয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে স্বজনদের হাতে। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি সেই চিঠিতে লেখা আছে, ‘কন্যা কোনও বস্তু নয় যে দান করা হবে’। চিঠির শেষে আরও লেখা হয়েছে, ‘কন্যা ‘দান’ নয় রক্ত ‘দান’।
কোনও বিয়ের আমন্ত্রণপত্রেই এমন বক্তব্য সচরাচর দেখা যায় না। সম্ভবত সেই কারণেই নেটমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আমন্ত্রিত কোনও ব্যক্তি। আমন্ত্রণপত্রে রয়েছে পাত্রীর বাবার ফোন নম্বর। নেটমাধ্যমে কিছু ক্ষণেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই চিঠি। এর পরেই একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে পাত্রীর বাবার কাছে। ‘কন্যাদায়গ্রস্ত’ পিতাকে বলা হয়, ‘কন্যাদান’ না করে হিন্দু বাড়িতে বিয়ে হতে পারে না! কন্যাদানের বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি হিন্দু ধর্মের অবমাননা করেছেন। এমন কাজ করলে যে তাঁর পরিবারের বিপদ হতে পারে, সে হুমকিও দেওয়া হয়েছে ওই মধ্যবয়সীকে।
বাবার অভিযোগ, মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্যও তাঁর কাছে হুমকি ফোন আসছে। এই পরিস্থিতিতে খানিকটা চিন্তিত তিনি। ডিসেম্বরে মেয়ের বিয়ের আগে তাই তৈরি হয়েছে জটিলতা। ঘটনাচক্রে, মাস কয়েক আগেই একটি পোশাক বিপণির বিজ্ঞাপনে কন্যাদানের প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বলিউডের অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ছিলেন সেই বিজ্ঞাপনের মুখ। কন্যা যে কোনও দানের বস্তু নয়, বিজ্ঞাপনে তা শোনা গিয়েছিল আলিয়ার মুখে। সেই বিজ্ঞাপন ঘিরেও শুরু হয়েছিল তোলপাড়। হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিবাদ, হুমকির মুখে পড়ে শেষে সেই বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্ট পোশাক বিপণি।
অরিত্র মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমা ‘ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি’র প্রধান চরিত্র সংস্কৃতের শিক্ষিকা শবরী তথা অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীকে (Ritabhari Chakraborty) দিয়ে এই রীতি নিয়ে একটি ছোটখাটো যুক্তিশীল বাদানুবাদ করিয়েছেন। কন্যা ‘দানসামগ্রী’ নয় – এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে পর্দার বাইরে বেরিয়ে এবার এই সমস্যা দাঁড়াল বাস্তবের মাটিতে। কিন্তু এই ঘটনাটি একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ভাবনা! এ ক্ষেত্রে কোনও প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল না বলেই তাই বার বার মনে করাচ্ছেন পাত্রীর বাবা। ফোন ছাড়ার আগেও যিনি বারবার বলছিলেন, ‘‘আমরা যে কন্যাদান করব না, সে কথাও লেখা নেই চিঠিতে। শুধু লেখা আছে, কন্যা কোনও বস্তু নয় যে, দান করা হবে। আমরা রক্তদানের উপর বেশি জোর দিতে চেয়েছি। এটা আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ভাবনা। তবু এত হুঁশিয়ারি দিয়ে ফোন কেন আসছে? মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে যে এমন বিপদে পড়তে হতে পারে, তা আমরা কিন্তু কখনও ভাবিনি!’’