Kamduni Case: A brief timeline of Kamduni rape and murder case from 2013 to present day

Kamduni Case: গণধর্ষণের পর চিরে দেওয়া হয় পা, আর কী হয়েছিল সেই ওই অভিশপ্ত রাতে

কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ।

২০১৩ সালের ৭ জুন। দিনটা ছিল বুধবার। বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই দিন বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। কামদুনি বাস স্ট্যান্ডে তাঁর ভাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে দেরি করায় ওই তরুণী একাই রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশে।

অভিযোগ, বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে পাঁচিল ঘেরা একটি ঘরে নিয়ে যায় নজন দুষ্কৃতী। সেখানেই দফায় দফায় চলে গণধর্ষণ। এমনকী নির্যাতনের পর ছাত্রীটিকে ভেড়িতে ফেলে যায় দুষ্কৃতীরা। বেশ কিছুক্ষণ পর গ্রাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ৮ বিঘে ভেড়ি অঞ্চলে একটি পাঁচিলের পাশে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ছাত্রীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই ঘটনার নৃশংসতা ছিল শিউরে ওঠার মতো। নিহত তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর দুষ্কৃতীরা তাঁর দেহ চিরে দেয় নাভি পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: midday meal : মিড–ডে মিলের চাল চুরি, ধরা পড়লেন প্রধানশিক্ষক

ঘটনার রাতে পুলিশের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কামদুনিবাসী। পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে প্রায় খণ্ডযুদ্ধের রূপ নেয় ঘটনাস্থল। পুলিশের তিনটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৫ জুন পর্যন্ত নামানো হয় আধাসেনা।ওই বছরেরই ৯ জুন প্রাথমিক ভাবে কামদুনিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আনসার আলি মোল্লা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১০ জুন, সিআইডি তদন্তভার নেয়। আনসার আলি মোল্লা, আমিনুর আলি, সইফুল আলি, ভুট্টো মোল্লা, এনামুল মোল্লা, আমিন আলি, ভোলানাথ নস্কর এবং গোপাল নস্কর-সহ ৯জন গ্রেপ্তার হয়।

ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন নিহত তরুণীর সহপাঠী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়াল। ওই আন্দোলনে শামিল হন রাজ্যের বিদ্বজ্জনেদের একাংশও। কামদুনিকাণ্ড নিয়ে তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভাও।

২৯ জুন বারাসত জেলা আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। দিন দশেকের মাথায় পেশ হয় অতিরিক্ত চার্জশিট। ১২ আগস্ট,  কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলা বারাসত জেলা আদালত থেকে নগর ও দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত হয়। ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে কামদুনি কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় আড়াই বছর পর ২৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণা হয় কামদুনি মামলায়।

কামদুনির ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর, আমিনুর ইসলাম, রফিক গাজি এবং নুর আলিকে। এর মধ্যে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় গোপাল নস্করের। যে পাঁচিলঘেরা জায়গায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল, সেখানকার কেয়ারটেকার ছিলেন গোপাল।

দোষীদের মধ্যে আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ ইনামুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে। বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয় রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।

২০২২ সালে হঠাৎই আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে সেই নৃশংস ঘটনা। কারণ হাই কোর্টে কামদুনিকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবীরা আবেদন করেন, দোষীদের মধ্যে ৫ জনের সাজা মকুব করা হোক অথবা সাজা কমানো হোক। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ওই ঘটনায় মূল ভূমিকা ছিল আনসার আলি মোল্লা নয়, সইফুল আলি মোল্লার। এই যুক্তিকে সামনে রেখেই হাই কোর্টে ৫ জনের সাজা মকুব করার আবেদন জানান আইনজীবীরা। পাশাপাশি, সইফুলের প্রাণভিক্ষার আবেদনও করা হয়। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনের ফাঁসির সাজা মকুব করল। অন্য তিন জনের যাবজ্জীবনের সাজা মকুব করল। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে যাবজ্জীবন সাজার কথা শোনায় আদালত। বাকিদের খালাস করার কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুন: Eastern Railways: এবার লোকাল ট্রেনেও প্রথম শ্রেণির কামরার! জানেন কি সুবিধা পাবেন?