পোস্ত খাওয়া কী বাঙালিকে ভুলতে হবে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যের মানুষের মধ্যে। কারণ, পোস্তর আকাশছোঁয়া দামে এই চর্চা তুঙ্গে উঠেছে। এমনকী আগামীদিনে আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খাসির মাংস, ইলিশ মাছ ইতিমধ্যেই মধ্যবিত্তের হেঁসেলে ঢোকা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার বাদের খাতায় চলে যেতে বসেছে পোস্ত। যেহেতু খুচরো বাজারে দু’হাজার টাকা ছাড়িয়েছে পোস্তর কেজি তাই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে এই জন্য কেন্দ্রের নীতিকে দায়ী করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
পেট্রোল, ডিজেলের দামের ছ্যাঁকায় নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। ভোজ্য তেলের দামও ক্রমশ চড়ছে। কিন্তু পোস্তর দামের রকেট গতির কাছে সবকিছু পিছিয়ে পড়েছে। পোস্ত পাতে রাখা এখন বিলাসিতার সামিল।
সোমবার কলকাতার বাজারে এক কিলো পাইকারি পোস্ত ২২৭৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। খুচরো বাজারে যা ২৪০০ টাকা কিলো। অর্থাৎ মাঝারি মাপের ১০ থেকে ১২টি পোস্তর বড়া ভেজে খেতে গেলে সংসারের খরচ দাঁড়াবে ২৫০ টাকা। সঙ্গে থাকবে তেল ও গ্যাসের খরচ। ইতিমধ্যেই সেঞ্চুরি পার করেছে পেট্রোল। তিন–অঙ্কের দিকে এগোচ্ছে ডিজেল। রান্নার গ্যাসের দামে প্রায় ৯০০ টাকা ছুঁইছুঁই। ভোজ্য তেল তো ২০০ টাকা ছুঁয়েছে।
এদিকে রাজ্যে প্রতি মাসে পোস্তর চাহিদা ৪০ মেট্রিক টন। ৪০ মেট্রিক টনের মধ্যে রাজস্থান থেকে পশ্চিমবঙ্গ ৪০ শতাংশ পোস্ত আমদানি করে। বাকি ১০ শতাংশ আসে মধ্যপ্রদেশ থেকে। ১০ শতাংশ আসে গুজরাট থেকে। ৫ শতাংশ আসে উত্তরপ্রদেশ থেকে। আর বাকি ৩৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আসে। তুরস্ক থেকে ২৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০ শতাংশ পোস্ত আসে। এই রাজ্যে পোস্ত উৎপাদন হয় না। মাস তিনেক আগে তা ছিল ১৪০০ টাকা। তা হঠাৎ রকেট গতিতে বেড়েছে।
অন্যদিকে প্রশ্ন উঠছে, পোস্তর দাম এত বাড়ল কেন? ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে চাহিদা একই থাকলেও বিদেশি পোস্তর জোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। করোনা আবহে অনিয়মিত বিমান চলাচল এবং আমদানি শর্ত কঠোর হয়েছে। তাই একধাক্কায় বাজারে ৩৫ শতাংশ পোস্তর জোগান বন্ধ হয়েছে। তাই দাম রকেট গতিতে বেড়েছে। এই বিষয়ে পোস্তা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সঞ্জয় দে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০ শতাংশ চাষ হয়। বাকিটা আমদানি করতে হয়। লাইসেন্স দু’বছর ধরে বন্ধ। আমদানি করলে কেস দিয়ে দিচ্ছে। মনোপলির জন্য দাম বাড়ছে।’