দলত্যাগের ঠিক ৯ মাসের মাথায় তৃণমূলে ফিরলেন বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । রবিবার দলত্যাগের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন তিনি। বললেন, “আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত, ভুল স্বীকার করছি।” বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে বিধানসভা ছেড়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। বিজেপি যোগের পরও মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে দেখলেই, প্রতিবাদ করেছিলেন। বারবার বুঝিয়েছিলেন, দলত্যাগ করলেই কিছু সম্পর্ক শেষ হয় না। ৯ মাস পর তৃণমূলে ফিরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন রাজীব। তাঁকে গোটা ভারতের ‘মা’ বলে সম্বোধন করলেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী।
বিধানসভা ভোটের আগে চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি নিয়ে গিয়ে অমিত শাহের বাসভবনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে যোগদান করিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু নিজের কেন্দ্র ডোমজুড়ে জিততে পারেননি রাজীব। তারপর থেকেই বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ শুরু হয় রাজীবের। বিজেপির অবস্থানের বিরোধিতা করেন। রাজ্য সরকারের ‘পাশে’ থাকার বার্তাও দেন রাজীব। পাশাপাশি তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা চালিয়েছেন নিরন্তর। রবিবার ত্রিপুরার আগরতলায় রবীন্দ্রভবনের সভামঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। যোগদানের পর এদিন রাজীব বলেছেন, “অভিমানে ভুল করেছিলাম। রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই সময় অভিষেক আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি শুনিনি। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। যেদিন বুঝতে পেরেছি, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আজকে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত।”
রাজীব রবিবার শোনান তাঁর বিশ্বাসভঙ্গের কথাও। বলেন, ‘‘বিজেপি-কে বিশ্বাস করে আমার যেমন বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে, তাই আপনাদেরও বলব বিজেপি-কে বিশ্বাস করবেন না। আর কংগ্রেস ও সিপিএম-কে ভোট দেওয়ার মানে বিজেপি-র হাত শক্ত করা। তাই ওদের আর ভোট দেবেন না।’’ রাজীব আরও বলেন, ‘‘আমাকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি ভোটের সময় ওদের সভা থেকেই বলেছিলাম, ব্যক্তিগত আক্রমণ কখনওই মানুষ ভাল ভাবে মেনে নেবে না। তাই হয়েছে, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঠিক, তা বাংলার মানুষ তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আর আমি এবং আমরা যে ভুল ছিলাম, তাও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ ব্য়াখ্যা করতে গিয়ে রাজীব বলেন, সেদিন আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু তখনও আমি বলেছিলাম আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আপনাদের মতো আমাকেও নানা রকম রঙিন ছবি দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাংলার উন্নয়ন যদি কেউ করতে পারে তাহলে তা করতে পারে বিজেপি। শিল্প হবে, বেকারের চাকরি হবে। একথাটা আজ বলছি কারণ আমি চাই আমি সেদিন যে ভুলটা করেছি, সেটা অন্য কেউ করুক। দেশের আর কেউ যেন এই ভুল না করেন। দুয়ারে সরকার যখন চালু হয়েছিল তখন আমার মনে হয়েছিল ভোটের জন্য এই প্রকল্প চালু হরা হয়েছে হয়তো। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তাই ভোটের পরও দুয়ারে সরকার চলছে, স্বাস্থ্যসাথী চলছে।
প্রসঙ্গত,রাজীব এতদিন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর তিনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। বছর শেষ হওয়ার আগেই, ৩১ অক্টোবর তৃণমূলে ফের যোগ দিয়ে তিনি বিজেপি সফর শেষ করলেন।