যত দিন যাচ্ছে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব ততই বাড়ছে রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর। বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ এতটাই প্রকট হয়েছে যে বিজেপি কার্যালয়ের ভিতর একাধিক প্ল্যাকার্ড, ফ্লেক্সে বিজেপি সাংসদের মুখ ঢেকে দিয়েছেন বিধায়ক অনুগামীরা। এরই মধ্যে কৃষ্ণ কল্যাণীর অভিযোগ, “দেবশ্রী চৌধুরী আমাকে রায়গঞ্জ থেকে হারাতে চেয়েছিল। হারাতে পারেনি। তাই এখন দল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
গত রবিবারই এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সঙ্গে একপ্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তারপর থেকেই তাঁর তৃণমূল যোগ নিয়ে জল্পনা চলত। এরই মধ্যে তিনি দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন। দিল্লি থেকে ফিরেই দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। দাবি করলেন, “দেবশ্রী আমাকে হারাতে চেয়েছিল। হারাতে পারেনি। এখন হারাতে না পেরে দল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” কল্যাণীর (Krishna Kalyani) অভিযোগ, দেবশ্রী চৌধুরী তাঁকে অসম্মানিত করেছেন। এমনকী ইসলামপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের (Nisith Paramanik) অনুষ্ঠানে তাঁকে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক।
আরও পড়ুন: RS Election: এবার বাংলার রাজ্যসভা উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা কমিশনের
পালটা দেবশ্রী চৌধুরী বলেছেন্, “উনি মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে গিয়েছেন। আমাকে ওর পছন্দ না, তাই ছবি ঢেকে দিয়েছে। আসল বিরোধ জেলা সভাপতির পদ নিয়ে। কিন্তু আমার হাতে সংগঠনের দায়িত্ব নেই। ভোটের আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আর এখন আমাকে পছন্দ করছে না।” প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। কৃষ্ণ কল্যাণী বলেছেন, “মানসিক রোগ কার হয়েছে আপনারাই বিচার করবেন। আমি পদ থেকে সরিনি। দেবশ্রীকে সরিয়ে দিয়েছে দল। আমি বিধায়ক হিসাবে আমার কাজ করব। আমার জন্যই রায়গঞ্জে বিজেপির (BJP) জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সেটা সহ্য হচ্ছে না দেবশ্রীর।”
এখানেই থেমে থাকেননি কৃষ্ণ। তাঁর দাবি, “দেবশ্রী তো রায়গঞ্জ থেকে বিধানসভার ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি নাকি মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়েও ছিলেন। এখন স্বপ্ন দেখছেন রাজ্য সভাপতি হবেন। উনি রাজ্য সভাপতি হলে ১০ জন বিধায়কও বিজেপি-তে থাকবে না। একটি খবরের কাগজে পড়লাম যে তিনি বলেছেন, আমি নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছি। আমি কোনও কিছু হারাইনি। হারিয়েছেন তো তিনি। ওঁর মন্ত্রিত্ব গিয়েছে।”
কৃষ্ণের বিস্ফোরক মন্তব্যের পরও তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা বক্তব্যে নারাজ দেবশ্রী। তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। পাগলের প্রলাপ, তার পিছনে ছুটব না। আমার রাজনৈতিক আয়ু ৩২ বছর। এত দিন ধরে সংগঠনের কাজ করছি। তিনি (কৃষ্ণ) যা মনে করছেন, বলছেন।”
প্রসঙ্গত, রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রীর হাত ধরে পদ্ম শিবিরে আসা কৃষ্ণর। সেই দেবশ্রীর সঙ্গে মতবিরোধ কিসের ঈঙ্গিত? তবে কি কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়ের মতোই দল ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পথে হাটছেন তিনি? এরই মধ্যে দেবশ্রীর বিরুদ্ধে তাঁর এই বিষোদগার দলবদলের জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিল। তবে, কৃষ্ণ দাবি করেছেন তিনি বিজেপি ছাড়ছেন না। তাঁর সাফ কথা, “বিজেপি আমি ছাড়ছি না। বিজেপি ছাড়লে আমি দিল্লি যেতাম না, কলকাতা যেতাম।”
আরও পড়ুন: রেশন কার্ড না থাকলেও প্রতি মাসে ফ্রিতে ৫ কেজি খাদ্য সামগ্রী,বিশেষ প্রকল্প রাজ্য সরকারের