Site icon The News Nest

Ramadan 2020: রোজা, ঈদ ও চাঁদ দেখা সম্পর্কে কিছু কথা

সৈয়দ আলি মাসুদ:

ইসলাম ধর্মে চাঁদ কিংবা সূর্য কেউই আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তারা সৃষ্টিকর্তার নিয়মের আজ্ঞাবাহী। সমস্ত সৃষ্টির মতই চাঁদ- সূর্যও পরম করুণাময়ের সৃষ্টি ছাড়া কিছু নয়। ইসলামে চাঁদের গুরুত্ব পঞ্জিকার জন্য। ইসলামি ক্যালেন্ডার চাঁদের হিসাবে চলে। এই ইসলামি ক্যালেন্ডার বাদ দিলে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ ছাড়া আর কি !

আমরা ঘড়ি দেখে সময় ঠিক করি। বস্তুগত মূল্য ছাড়া ঘড়ির বাড়তি গুরুত্বই বা কি? ঘড়ির বাড়তি গুরুত্ব শরদ পাওয়ারের এনসিপি ছাড়া আর কেউ দেবে না। এটা তাদের নির্বাচনী প্রতীক। এই ঘড়ির হিসাবই দেখুন না। পাশের দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সময়ের ফারাক আধঘন্টা। অথচ দিল্লির সঙ্গে কোনো ফারাক নেই। কারণ দিল্লি আমাদের দেশ। সেখানে ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইমই শেষ কথা। আসলে সবটাই চলে গ্রিনিচ মান সময় মেনে । তা নিয়ে কোনো বিবাদ নেই। মানুষ এটা মেনে নিয়েছে। সময়ের মধ্যে গোলমাল দূর করতে সকলে লন্ডনের গ্রিনিচ সময় মেনে নিয়েছি। মেনে নিলে আর সমস্যা কোথায়।

মুসলিমরাও চাঁদের পঞ্জিকা মেনে নিয়েছেন। ভারতের মত দেশে সাধারণ মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবন চন্দ্র কালেন্ডারে চলে না। সে সুযোগও তাদের নেই। তারা যে বিষয়টি নিয়ে খুব আগ্রহী তেমনটাও বোধহয় নয়। এখানে রমজান এবং ঈদেই চাঁদ দেখা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। অন্য মাসগুলিতে তেমন একটা চর্চা হয় না। এমনকি আরবি ক্যালেন্ডারে মাসের নাম বলতে বললেও বাংলার বেশিরভাগ মুসলিম তা পারবে না। তারা গড়ে বড়জোড় যে কটি মাসের নাম বলতে পারবে তা হল, মহরম , সফর , সাবান , রমজান, জিলহজ এবং জিলকদ। সম্ভবত এর বেশি নয়।

সত্যি কথা বলতে কি রমজান, ঈদ এবং হজ ছাড়া আলাদা করে চাঁদের খবর তাঁরা রাখেন না। চাঁদ দেখে শুরু হয় রোজা। চাঁদ দেখে শুরু হয় ঈদ। আজকাল অনেকেই বলেন, প্রযুক্তির এই যুগে চাঁদ দেখা গেল কি গেল না সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। ১৫০০ বছর আগে মানুষের হাতে চাঁদ দেখার যন্ত্র ছিল না। তাই খালি চোখে চাঁদ দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। আজ কেন তা করতে হবে? বহুদিন ধরেই অবশ্য দূরবীনের সাহায্যে চাঁদ দেখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তা যে মুসলিমরা মেনে নেন না তাও নয়। তবে খালি চোখে চাঁদ দেখার আলাদা মজা। সে চাঁদ যদি ঈদের খবর বয়ে আনে তাহলে তো কথাই নেই।

আরও পড়ুন: Ramadan 2020: রোজা সম্পর্কে কয়েকটি সহজ কথা

ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল হেজাজ অর্থাৎ মক্কা এবং ইয়াসরিব অর্থাৎ মদিনা থেকে। আরবের ঊষর মরু আবহাওয়ায় চাঁদ দেখার সমস্যা ছিল না। ঘন নীল আকাশের সৌন্দর্য ছিল প্রাণ ঢালা। আজকের দিনের মত আকাশ সেদিন ধূসর হয়ে যায়নি। আকাশের বুকে যখন বাঁকা চাঁদ উঠত তখন তার সৌন্দর্য মুগ্ধ করত সকলকে। এখনও যদি আসমানের বাঁকা চাঁদের দিকে তাকান, তার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে।
এ পর্যন্ত গেল যুক্তির ও ইতিহাসের কথা। এবার ধর্মের কথাই আসা যাক। ধরা যাক আকাশ মেঘে ঢেকে গিয়েছে তাহলে কি রোজা হবে না, নাকি ঈদ হবে না? বলে রাখি তাতেও কোনো অসুবিধা হবে না। লকডাউনে আপনি অফিস যাচ্ছেন না, তাই বলে সোমবার কি বুধবারে পরিণত হয়েছে? আমরা কি দিন-তারিখের হিসেবে ভুলে গিয়েছি? তাই আকাশে চাঁদ না উঠলেও রোজা কিংবা ঈদ হয়। অনেক সময় মালদায় হয়ত আকাশ মেঘে ঢাকা কিন্তু বাঁকুড়ায় খটখটে রোদ। তাই মালদার লোক চাঁদ না দেখতে পেলেও বাঁকুড়ার লোক পেতে পারেন। অন্তত তিনজন এই চাঁদ দেখলেই সেখানে তারা ঈদ পালন করতে পারেন। তাতে কোনও অসুবিধা নেই।

মনে হতে পারে এই তিনজনের কথা বিশ্বাস করে কি এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে? আসলে ইসলামের অন্যতম শর্ত সত্যবাদিতা। একজন মুসলিম অহেতুক মিথ্যা বলবেন, তা ইসলাম মনে করে না। হজরত মুহাম্মদ (সা) কে তার সাথীরা(সাহাবীরা) একবার জিজ্ঞাসা করলেন, মুসলমান কি ভীতু হতে পারে? তিনি জবাবে বলেছিলেন পারে। ফের তাঁরা প্রশ্ন করেন মুসলমান কি কৃপণ হতে পারে? তিনি বলেছিলেন পারে। এর পর তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন মুসলমান কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন না। সুতরাং এই কয়েকটি লোকের কথাতে কেন ঈদ পালিত হতে পারে তা আসা করি বোঝা গিয়েছে।

তবে অন্য প্রতিষ্ঠিত সব ধর্ম পালনকারীদের মতই মুসলিমরা অনেকেই যে তার প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। সে তো আদালতেও মানুষ মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য কি সংবিধান গুরুত্বহীন হয়ে যায়? এসব না কপচে সোজা কথায় বলি সব মুসলিম নিজের চোখে চাঁদ দেখে রোজা রাখেন এমন নয়। আজকাল খালি চোখে আকাশই দেখেন কজন বলুন তো? আকাশ তো দখল নিয়ে গগনচুম্বী অট্টালিকা। চোখ সেখানে ধাক্কা খেয়েই জমিনে ফেরে। তাই খুব ইচ্ছা থাকলেও চাঁদ দেখে রোজা রাখতে পারেন না বেশিরভাগ মুসলিম। একফালি বাঁকা চাঁদ দেখে খুশির ঈদ পালনও বেশিরভাগের কপালে জোটে না। তবে চাঁদের হিসাবটা রয়েছে। অনেকে এটিকে বেশি প্রামাণ্য বলে দাবি করেন। তাদের যুক্তি নরওয়েতে ৬ মাস সূর্য ওঠে না। তাহলে সূর্যের হিসাব চলে কি করে!

আরও পড়ুন: সুইস শৃঙ্গের চূড়ায় আলোকিত তেরঙা, ঐক্যবদ্ধ করোনা যুদ্ধের ডাক

Exit mobile version