ওয়েব ডেস্ক: অক্ষয় তৃতীয়া মানেই বিকেলে হালখাতা করতে যাওয়া। এমনটা যারা ভেবে আসছেন তাঁরা নিঃসন্দেহেই ভুল ভাবছেন। হিন্দু ধর্মানুভূতির সঙ্গে গভীর যোগ রয়েছে অক্ষয় তৃতীয়ার।
পয়লা বৈশাখের পর এবছর লকডাউনের মাঝেই অক্ষয় তৃতীয় পালন করবে বাঙালিরা। রবিবার,২৬শে এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ মহরত। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকাজ সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। তাই এই তিথিতে সোনার বা রূপার গয়না কেনা হয়। হিন্দি বলয়ে অক্ষয় তৃতীয়া পরিচিত ‘আখা তীজ’ নামে।
অক্ষয় তৃতীয়ার তাৎপর্য- অক্ষয় তৃতীয়া হল বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এইদিন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এইদিনই আবির্ভূত হয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। জানা যায় আজকের দিনেই নাকি মহাভারত রচনার কাজ শুরু করেছিলেন বেদব্যাস ও গণেশ। হিন্দু পুরান মতে এইদিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ক্রেতাযুগের সূচনা হয়। বলা হয় অক্ষয় তৃতীয়াতেই নাকি রাজা ভগীরথ দেবী গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই নাকি কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হয়েছিল। তাই এদিনে ধন-লক্ষ্মীর পুজো করা হয়।
,এদিন দান-ধ্যান করলে বা পূজা-অর্চনা করলে দীর্ঘসময় তার ফল ভোগ করা যায়। যে কোনও শুভ কাজ এইদিন অনুষ্ঠিত হতে পারে, তার জন্য কোনও জ্যোতিষের পরামর্শ নেওয়ার দরকার নেই। যে কোনও ব্যক্তি এদিন মন থেকে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করলে তাঁর ‘অক্ষয়’ জ্ঞান প্রাপ্তি হয়। মনে করা হয়, অক্ষয় তৃতীয়ায় রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে, এই আশাতেই এদিন মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন। এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: অক্ষয় তৃতীয়া ২০২০: জেনে নিন সোনা কেনার মহেন্দ্রক্ষণ…
অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোর মহরত- পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামিকাল সকাল ৬.৩৬ মিনিট থেকে ১২.৩৬ মিনিট পর্যন্ত বিষ্ণুর পুজো করার জন্য উপযুক্ত সময়। তবে এবার লকডাউনের জেরে হয়তো গঙ্গায় স্নান করা সম্ভবকর হবে না। মন্দিরও বন্ধ,তাই বাড়িতেই পুজো করতে হবে। অক্ষয় তৃতীয়ার তিথি শুরু ২৫ এপ্রিল সকাল ১১.৫১ মিনিট থেকে ২৬ এপ্রিল বেলা ১টা ২২ মিনিট পর্যন্ত।
অক্ষয় তৃতীয়া ও দ্রৌপদীর কাহিনি- পুরাণ অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ার এই দিনেই দ্রৌপদীকে অক্ষয় পাত্র দান করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। কথিত আছে মহাভারতে পাণ্ডবরা যখন বনবাস করছিলেন, তখন একদিন ঋষি দুর্বাসা তাঁদের কুটীরে প্রবেশ করেন। কোন খাবার অবশিষ্ট না থাকায় পঞ্চপাণ্ডব পত্নী দ্রৌপদী কীভাবে ঋষির আপ্যায়ন করবেন বুঝতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি আবির্ভূত হয়ে পড়ে থাকা পাত্র থেকে একটি দানা খান। এবং গোটা বিশ্বের ক্ষুধা নিবারণ হয়েছিল সেই একটি দানাতেই।
অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোর রীতি- গঙ্গায় স্নান করতে যাওয়া সম্ভব নয় তাই বাড়িতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে স্নান করা পর বিষ্ণুমূর্তিতে চন্দন মাখাতে হবে। এর সঙ্গে দিতে হবে তুলসীপাতা। সম্ভব হলে বেলফুলও দেওয়া যেতে পারে।
প্রিয়জনকে পাঠাতে পারেন এই শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তা।
আরও পড়ুন: আগামীকাল অক্ষয় তৃতীয়া, লকডাউনের জেরে ভরসা অনলাইন বিক্রি