Site icon The News Nest

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে নিহত ২৫

anti junta

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী গত শুক্রবার দেশটির জান্তা সরকারের বিরোধী ২৫ জনকে হত্যা করেছে। আজ রোববার দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সাগাইং অঞ্চলের ডেপাইন শহরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিষয়ে দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন : ফিলিপাইনে সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানায়, ডেপাইনে টহলরত নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিত আক্রমণ করেছিল। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে আক্রমণকারীরা পিছু হটে।

গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের জান্তা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজন প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি করে নৃশংস জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন। তবে বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

ডেপাইনের এক বাসিন্দা বলেন, গত শুক্রবার সকালে গ্রামের কাছে চারটি ট্রাক থেকে সেনারা নামেন। স্থানীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরুণেরা তাঁদের ঠেকাতে অবস্থান নেন।

কিন্তু তাঁদের হাতে ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র। নিরাপত্তা বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলাগুলিতে তাঁরা পিছু হটেন। ওই লড়াইয়ের পর ২৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিবিসি বার্মিজ ও স্থানীয় থান লিউইন খেট নিউজেও একই সংখ্যার কথা বলা হয়েছে।
তবে ডেপিয়ানের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স তাদের ফেসবুকে বলেছে, তাদের ১৮ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১ জন।

মিয়ানমারের জান্তাদের প্রতিরোধে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস নামের প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেশটির সামরিক প্রশাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গঠিত ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সম্পর্ক রয়েছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে অনেক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ যায়।

কারাবরণ করতে হয় অনেককে। সহিংসতা খানিকটা কমে আসতে শুরু করলে বেশ কিছু সংগঠন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।

জান্তাবিরোধী সংগঠনগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পর সেখানে আবার সহিংসতা বেড়েছে। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তাদের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে।

মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দুই ডজনের বেশি জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীরা জান্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করছেন। তবে ডেপাইন হচ্ছে সংখ্যালঘু বামারদের কেন্দ্রস্থল, যেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা আধিপত্য দেখিয়ে থাকেন।

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানের আগে থেকেই অন্তত ২০টি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক হতাহত হয়। জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে তৈরি হওয়া এসব প্রতিরক্ষা দল সেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে।

ব্রাসেলসভিত্তিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে পড়লে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের সেনাসদস্যদের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নামিয়ে দিতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি হবে। তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সহিংসতা বাড়লে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

আইসিজির তথ্যমতে, মিয়ানমারের এমন সব জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যেসব জায়গায় গত এক দশকে কোনো সহিংসতা হয়নি। জাতিসংঘের গত সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

৫ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। তবে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব সংখ্যা ঠিক নয়।এদিকে মিয়ানমারের আদালতে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার বিচারকাজ চলছে।

আরও পড়ুন : যৌন উত্তেজনা বাড়াতে ভায়াগ্রার চেয়েও বেশি শক্তিশালী তরমুজ, কিন্তু কীভাবে খেতে হবে জেনে নিন

Exit mobile version