বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার (Bangladesh Violence) ঘটনা রুখতে অতি সক্রিয় পুলিশ। কুমিল্লার পুজোমণ্ডপে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান (Quran) রেখে হিংসা ছড়ানোর মূলচক্রীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল আগেই। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজের (CCTV Footage) সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কক্সবাজার থেকে বছর পঁয়ত্রিশের ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পেশ করা হবে শুক্রবার।
দুর্গাপুজো চলাকালীনই কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের একটি পুজোমণ্ডপে কোরান রাখাকে ঘিরে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে হিংসা ছড়ায়। ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা ও প্যান্ডেল ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিন্দায় সরব হন দেশ-বিদেশের মানুষ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা(Sheikh Hasina) ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে বলেন, “কুমিল্লায় যে ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে, সেটা খুব দুঃখজনক। কারণ, মানবধর্মকে সম্মান করাই ইসলামের শিক্ষা। নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার রয়েছে, তেমনই অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়, অন্য ধর্মকে হেয় করলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়ে যায়। এই মাটিতে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।”
দুর্গামণ্ডপে কোরান রাখা ও তার জেরে হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তৎপর হয় ব়্যাব। কুমিল্লার ওই পুজোমণ্ডপের আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই ইকবাল হোসেনকে চিহ্নিত করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আন্দাজ, গভীর রাতে স্থানীয় একটি মাজার থেকে পবিত্র কোরান নিয়ে গিয়ে দুর্গামণ্ডপে রেখেছিল ইকবাল।
তবে বারংবার জায়গা বদল করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ কক্সবাজারের সুগন্ধা এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। রাতেই চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মহম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, আটক করা ইকবাল নামের ওই যুবকই কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে কুমিল্লায় পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ তদন্ত করে বিষয়টি পরিচয় নিশ্চিত করবে।
এ দিকে, পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কুমিল্লার সুজানগরের বাসিন্দা ইকবাল মাদকাসক্ত। কোনও স্থায়ী কাজ করে না, মাঝেমধ্যে বাসের হেল্পার, কখনও বা রংমিস্ত্রির সহকারী হিসাবে কাজ করে। ভবঘুরের মতো জীবন কাটানো ইকবাল প্রায় সময়ই মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য পরিবারের সদস্যদের বিরক্ত করতেন বলেও জানা গিয়েছে। ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, সিসিটিভি ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা গিযেছে, তা ইকবালই।
ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করছে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ করে রামু,নাসিরনগর, ভোলা সহ বেশ কিছু এলাকায় ফেসবুকে ভুয়ো তথ্য এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে খবর এসেছে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, ফেসবুকে এই ধরনের কোনও সংবেদনশীল তথ্য পাওয়ার পর, তার সত্য়তা যেন যাচাই করা হয়।