ওয়েব ডেস্ক: সৌরজগতের অন্যতম উন্নত ও প্রাণী জগতের বাসযোগ্য এই গ্রহের সুস্থতা, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ও পৃথিবীকে ধন্যবাদ জানাতে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে।
১৯৬২ সালে এক জন মানুষের লেখা বদলে দেয় পুরো প্রেক্ষাপট। তিনি হলেন— সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী র্যাচেল লুইজ কার্সন। তাঁর লেখা ‘Silent Spring’ বইয়ে তিনি পরিবেশের উপরে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। আমেরিকার জনগণের মধ্যে তুমুল গণ-আলোড়ন সৃষ্টি করে বইটি। জন্ম নেয় আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের। বইটি প্রকাশের পরে আমেরিকায় বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশক যেমন, ডিডিটি ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ ভাবেই শুরু হয় গণজাগরণের পটভূমি। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, পরিবেশ বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তা।
আরও পড়ুন: অচেনা করোনা আতঙ্ক হাসপাতাল ছাড়া করেছে মুমূর্ষু রোগীদের
সেই ধারণা থেকে কয়েক বছর পর আসে একটি নির্দিষ্ট দিনকে পরিবেশের জন্য রাখার পরিকল্পনা। রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে দূরে সরে পরিবেশ আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন। ১৯৬৯ সালে তিনিই প্রথম বারের মতো ধরিত্রী দিবস উদ্যাপনের প্রস্তাব দেন। কয়েক জন শিক্ষার্থীর সহায়তায় ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল আয়োজন করা হয় প্রথম ধরিত্রী দিবস। প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ দিনটি উদ্যাপন করেছিলেন।
এই বছর এই ধরিত্রী দিবসের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদ্যাপন। ‘ক্লাইমেট অ্যাকশান’ স্লোগান দিয়ে জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া হবে যে, পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবেশ ও জলবায়ুর গুরুত্ব কতখানি। পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখে ১৯৭০ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিভিন্ন আইন। ‘Environmental Protection Agency’, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ‘Clean Air Act’, জল সংরক্ষণ করার জন্য ‘Clean Water Act’, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য গঠন করা হয় ‘Resource Conservation and Recovery Act’। এমন বহু আইন গোটা বিশ্ব জুড়ে প্রনয়ণ করার পরেও আজ এই পৃথিবী সঙ্কটের মুখে।
এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য—‘ক্লাইমেট একশন’ পরিবেশ এবং প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখাই এই দিবসটির লক্ষ্য।
এ বছর এমন সময় ধরিত্রী দিবস পালন হচ্ছে, যখন সমস্ত পৃথিবী কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত। প্রকৃতি আসলে নিজের শুন্যস্থান নিজেই পূরণ করে নেয়, কারো জন্যে অপেক্ষা করে না। ধরিত্রীকে অর্থাত্ প্রকৃতিকে আমরা আমাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধ্বংসের কিনারায় দাঁড় করিয়েছিলাম। পরিবেশ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিদগণের আবেদন নিবেদনে কেউ কর্ণপাত করেনি।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আর বন্যপ্রাণী বানিজ্য ঠেকানো বিশ্ব নেতাদের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। আজ সমগ্র পৃথিবী অসীম বাজেট নিয়ে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক বানাতে হন্যে হয়ে উঠেছে অথচ শিক্ষা নেবার দরকার ছিল ইতিহাস থেকে। বন বন্যপ্রাণীর জন্য সেখানে বন্যপ্রানীরা নির্ভয়ে চলাচল করবে মানুষের নাগালের বাইরে ফলে তাদের সংস্পর্শে আসার কথা নয় আমাদের।
লকডাউনের ফলে বিশেষ এই দিনটি পালনের জন্য ডিজিটাল মাধ্যেমর সাহায্য নিয়ে নিরাপদ ও দায়িত্বপূর্ণ ভাবে ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই পৃথিবীতে মনুষ্য সমাজকে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। সংরক্ষণের দায়িত্বও নিতে হবে তাদের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি সুস্থ পৃথিবী উপহার দিতে না পারেন, সে দায় কিন্তু আপনার ঘাড়েও বর্তাবে।
আরও পড়ুন: ওলাওঠা সেকেলে, এখন ট্রেন্ডিং গালাগালি হল ‘করোনা’