দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোটি কোটি ডলার খরচ করে, হাজার হাজার জওয়ানের দেহ কফিনবন্দি করে, দেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ করে খালি হাতেই আফগানিস্তান থেকে ফিরতে হচ্ছে আমেরিকাকে। মার্কিন সেনাদের এই ফিরে যাওয়া ভারতকে সবথেকে চাপে ফেলেছে ।
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে নয়াদিল্লি। যার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!যে অর্থ দিয়ে তৈরি হয়েছে বাঁধ, রাস্তাঘাট থেকে আফগান সংসদ ভবন। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে আফগান-ভূমে প্রভাব বাড়িয়েছিল ভারত। তালিবান ফের ক্ষমতায় উপক্রম হওয়ার পর নয়াদিল্লিকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
ন্যাটো ও মার্কিন বাহিনী সেনা প্রত্যাহার করতেই আফগানিস্তানে তালিবানি রাজ প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। ফলে ২০ বছর ধরে নয়াদিল্লি-কাবুল যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল তা ধাক্কা খেতে চলেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলা তালিবান সরকারকে মান্যতা দেয়নি ভারত।
৯/১১ হামলার পর আফগান মুলুকে প্রভাব বাড়াতে তৎপর হয় নয়াদিল্লি। ২০১১ সালে ভারত-আফগানিস্তান কৌশলগত সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। তার পর থেকে পরিকাঠামো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাঁধ নির্মাণে অর্থ-সহযোগিতা শুরু করে ভারত সরকার। ২০২০ সালে নভেম্বরে জেনেভা শীর্ষ সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, আফগানিস্তানের এমনও কোনও অংশ নেই যেখানে ভারত নেই। ৩৪টি প্রদেশে চলছে ৪০০-র বেশি প্রকল্প।
আরও পড়ুন : এক গনিকে সরিয়ে কাবুলের মসনদে আর এক গনি? প্রেসিডেন্টের বাসভবনে তালিবান
হেরাট প্রদেশে ৪২ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তালিবানি হামলায় ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে একাধিক ভারতীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণে। ২০১৬ সালে ৪২ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়। এই বাঁধ এখন তালিবানের নিয়ন্ত্রণে।
২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এই এলাকা। কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মজহর-ই-শরিফ ও হেরাট শহরকে ছুঁয়ে গিয়েছে এই রিং রোড। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই রাস্তা ধরে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারত নয়াদিল্লি। অতিমারির সময়ে চাবাহার দিয়ে আফগানিস্তানে ৭৫ হাজার টন গম পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। এই রাস্তা নির্মাণে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ ভারতীয়র।
আরও পড়ুন : রক্তপাত চাই না, কাবুলে ঢুকেই জানাল তালিবান, মেয়েদের নিরাপদ স্থানে রাখার বার্তা