ফের কারাবন্দি হওয়ার পথে মায়ানমারের তথাকথিত গণতান্ত্রিক নেত্রী আং সান সু কি (Aung San Suu Kyi)। চার বছরের জেল হল তাঁর। সেনার বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য এবং কোভিডবিধি ভাঙা – জোড়া মামলায় সোমবার তাঁর সাজা ঘোষণা করল মায়ানমারের জুন্টা আদালত। খবরটি জানিয়েছেন জুন্টার (Junta) মুখপাত্র জাও মিন তুন। এর মধ্যে স্রেফ কোভিডবিধি ভঙ্গের জন্য ৫০৫ (বি) ধারায় তাঁর ২ বছরের কারাবাস হয়েছে। আরও ২ বছর সু কি-কে জেলে থাকতে হবে জুন্টাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের অপরাধে।
মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭৬ বছর বয়সী নোবেলজয়ী সু চিকে গৃহবন্দি করা হয়। তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (NLD) আরও কয়েকজন সদস্যকেও নেত্রীর সঙ্গে গৃহবন্দির নির্দেশ দেওয়া হয়। এমন কী সু কির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতলেও দলনেত্রীকে গৃহবন্দি রাখার নিদান দেওয়া হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত মায়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসনই চলেছে। সেই সময় প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দি হয়েই কাটাতে হয়েছে সু কিকে। সেই সু কির বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তোলা হয়। একই সঙ্গে করোনা কালে অতিমারি আইন ভাঙা-সহ নানা বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে বেআইনিভাবে কয়েক লক্ষ ডলার নেওয়ার অভিযোগও তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
জেলযাত্রা নতুন নয় মায়ানমারের (Myanmar) গণতান্ত্রিক নেত্রীর। বরং তাঁর জীবনের অধিকাংশই কেটেছে কারাগারে। সেনা শাসনাধীন মায়ানমারে একাধিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সু কি-কে দীর্ঘ সময়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি মুক্তি পেয়ে গণতান্ত্রিক পথে হেঁটে, ভোটে লড়াই করে রাষ্ট্রপ্রধানও নির্বাচিত হন। মায়ানমারে ফিরে আসে গণতন্ত্র। কিন্তু সু কি দেশের প্রধান হয়ে কুরসিতে বসার পর পরই তাঁর বিরুদ্ধে ফের একাধিক অভিযোগ উঠতে থাকে। এমনকী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া,বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক দাবি বিএনপির
সংবাদ সংস্থা এএফপি (AFP) সূত্রে খবর, সু কি’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চলছিল। পরে আরও একটি মামলা দায়ের হয়। মায়ানমারের সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রে মাস তিনেক আগেই এই খবর প্রকাশ্যে আসে। গত জুন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছিল, রাজধানী নাইপিদাওয়ের একটি থানায় সু কি’র বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁর দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। অভিযোগ, ‘Daw Khin Kyi Foundation’ নামের একটি দাতব্য সংস্থার জমি নয়ছয় করেছেন সু কি ও তাঁর সঙ্গীরা। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ২০ বছরের জেলের সাজা হতে পারত।
#BREAKING Myanmar's Suu Kyi jailed for four years: govt spokesman pic.twitter.com/hnEXvgYNwX
— AFP News Agency (@AFP) December 6, 2021
সোমবার নাইপিদাওয়ের আদালতে সু কি’র মামলার শুনানি চলাকালীন সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। যাতে সু কি নিজে সংবাদমাধ্যমে কোনও বক্তব্য পেশ করতে না পারেন, তাই এই নিষেধাজ্ঞা বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর আইনজীবীদের আগেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এদিন শাস্তি ঘোষণার পর সু কি-কে কোথায় রাখা হবে, তা এখনও জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: প্রেম করার সময় সেক্সের ইচ্ছা হলেই বিয়ে! ৫২ বছরে ১২ ছাদনাতলায় এই মহিলা