কলকাতা: ঠাকুরপুকুরে একই পরিবারের ৩ জনের দেহ উদ্ধার। মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের ৪৮ বছর বয়সী বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ছেলের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রতিবেশীদের দাবি, অনটনের জেরে বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হতে না-পারায় আত্মঘাতী হয়েছে গোটা পরিবার। এজন্য পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুলছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরপুকুরের সত্যনারায়ণ পল্লিতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ গোবিন্দ কর্মকার, স্ত্রী রুনু ও ৪৮ বছরের ছেলে দেবাশিসের দেহ উদ্ধার হয়। ঘরের মেঝেতে লেখা ছিল, ‘আমরা সবাই মৃত।’ পাশে একটি বোতলে বিষ রয়েছে বলেও উল্লেখ ছিল।
আরও পড়ুন : গেরুয়া জার্সি গায়ে বিজেপির ট্র্যাকে দৌড়াতে নামলেন ‘সোনার মেয়ে’ জ্যোতির্ময়ী
করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বছর আশির গোবিন্দ কর্মকারের। কিন্তু করোনা-আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেলে তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রী এবং পঙ্গু ছেলেকে কে দেখবে? টাকাপয়সাও তো নেই, তা হলে ওঁদের চলবে কী করে? এই আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা থেকেই কি স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বৃদ্ধ গোবিন্দবাবু? ঠাকুরপুকুরের সত্যনারায়ণ পল্লির কর্মকার পরিবারের আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ, সুইসাইড নোট এবং মৃত্যুর আগের ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে এমন সম্ভাবনার কথাই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, প্রবীণ গোবিন্দবাবু নানা রকম কাজ করে সংসার প্রতিপালন করতেন। ফলে সংসারে অনটন আগে থেকেই ছিল। লকডাউনের জেরে অনটন আরও তীব্র হয়। এর মধ্যে স্ত্রী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার পড়ে গিয়ে চোট পান গোবিন্দবাবু। প্রতিবেশীরা ঠাকুরপুকুর থানায় খবর দিলে বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁকে নিতে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। সেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিনভর বৃদ্ধকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে বেড়লেও কোথাও ভর্তি হতে পারেননি তিনি। তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। এর পরই রাতে সম্ভবত বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে গোটা পরিবার।
এক প্রতিবেশী মহিলা বলেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দরজা খুলে সামনের বারান্দায় এসে বসতেন গোবিন্দবাবু। আজ সকালে দেখি দরজা বন্ধ। ভাবলাম ফের অসুস্থ হয়েছেন। দরজা ধাক্কা দিয়ে বার বার ডাকাডাকির পর কেউ দরজা না খোলায় দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা যায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে তিন জনের নিথর দেহ।” খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
ঘরে চক দিয়ে লেখা, ‘‘আমরা তিনজনই মৃত।” বিছানার পাশে একটা বাটি। তার পাশে লেখা, ‘‘সাবধান। বিষ।” আর তার পাশেই রয়েছে একটা দোমড়ানো রুলটানা কাগজে লেখা সুইসাইড নোট—।যাতে লেখা ছিল এক অসহায় বৃদ্ধের অনটন যন্ত্রনা। প্যারালাইসিস স্ত্রী এবং পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে এই লকডাউনে আর পেরে উঠছিলেন বৃদ্ধ গোবিন্দ কর্মকার। তাই কাউকে কষ্ট না দিয়ে তাঁরা পাড়ি দেন না ফেরার দেশে।
আরও পড়ুন : ভার্চুয়াল জনসভা থেকে মমতাকে উৎখাতের হুংকার শাহের, দেখে নিন কী বললেন