Site icon The News Nest

করোনা আতঙ্ক এ রাজ্যেও, জলের দরে মুরগি বিকোচ্ছে বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলায়

chicken

ওয়েব ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ভুয়ো পোস্ট আর গুজবের চক্করে মুরগির মাংস ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। আর এই ভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব আর নানানতর ভুয়ো পোস্টের জেরে একধাক্কায় মুরগির মাংসের বিক্রি কমল ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে নানাবিধ খবর ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন বলে দাবি মুরগি ব্যবসায়ীদের।।কিন্তু, সেই গুজবই গিলছেন আম জনতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে,  মুরগি থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে।কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই  ছবিটা এক। সামনেই হোলি, দোল উৎসব। চলছে বিয়ের মরশুমও। তাই এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা যে কী  করবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না। দুশ্চিন্তার ছাপ চোখে মুখে স্পষ্ট  অনেক ব্যবসায়ীর।

বাধ্য হয়ে তাই জলের দরে মুরগি বিক্রি শুরু করেছেন বিক্রেতারা। শুধু তাই নয় রীতিমতো মাইকে প্রচার করে চলছে মুরগির ‘সেল’। গোটা মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।

পুর্ব বর্ধমানের ভাতার বাজারের একাধিক মুরগি বিক্রেতা সকাল হতেই মাইকে হাঁকছেন, “সেল সেল সেল। গোটা মুরগি ৫৫ টাকা। মাংসের দাম ১০০। আপনারা আতঙ্ক সরিয়ে মুরগি খান। কোনও ভাইরাসের ভয় নেই।” এ প্রসঙ্গে ওয়েষ্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের পুর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির কর্মকর্তা তাতান রায় বলেন, “করোনা আতঙ্কে ব্রয়লার মুরগির বাজার এতটাই খারাপ যে বিগত ১০ দিনে সারা রাজ্যে মুরগি ব্যবসায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কলকাতার বাজারে রোজ ৬০ লক্ষ কেজি মুরগি যেখানে বিক্রি হত তা প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। দিনে এখন ২৪ লক্ষ কেজিও বিক্রি হচ্ছে না। শুধু কলকাতা বা বর্ধমান নয়, গোটা রাজ্যেই একই অবস্থা।”

ভাতারের এক মুরগি বিক্রেতা সুকান্ত দাস বলেন, “রোজই কমবেশি ভালই বিক্রি করতাম। বিশেষ করে রবিবার লাইন দিয়ে মুরগি কিনতেন ক্রেতারা। এখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কেউ কিনতে চাইছেন না। তাই মাইক লাগিয়ে প্রায় অর্ধেক দামে মুরগি বিক্রি করছি। তাতেও বিক্রি খুবই কম।”

বেশ কয়েক মাস আগে ভাগাড়কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে, রাজ্যে মুরগির মাংসের চাহিদা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছিল। আর বর্তমানে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে রাজ্যের সর্বত্র পোলট্রির মুরগির চাহিদা তলানিতে নেমে এসেছে। দোকান খুলে, মাছি তাড়াচ্ছেন দোকিনারা। ফিরেও তাকাচ্ছেন না ক্রেতারা। মন্দার বাজারে মুরগির মাংসের দাম কমিয়েও আখেরে সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছে না ব্যবসায়ী মহল।

আরও পড়ুন: পিঙ্ক সিটিতে জমিয়ে প্রেম কার্তিক আর কিয়ারার! সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া

কোনও কোনও ক্রেতা তো আবার  ডিম কিনতেও  সাহস পাচ্ছেন না। ফলে ডিমের ব্যবসায়ীদেরও কপালে চিন্তার মোটা ভাঁজ পড়েছে।পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের এক কর্মকর্তার বক্তব্য, মুরগির সঙ্গে করোনার যে সম্পর্ক নেই, তা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে। তবুও ক্রেতারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। ব্যবসার এই বেহাল  অবস্থায় রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। শুধুমাত্র চিনেই মৃত্যু হয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৬৫৮ জন। অন‌্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই মারণ ভাইরাসের বলি হয়েছেন ১১ জন। নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই ইটালীয় নাগরিকের মৃত্যুর পর অন্তত ৫০ হাজার নাগরিককে গৃহবন্দি করে ফেলেছে সে দেশ। এদিকে, ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্বেগ বাড়িয়ে গত বুধবার পাকিস্তানে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশ। সব মিলিয়ে চিনে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও, বিশ্বে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে এই মারণ রোগ।

 

Exit mobile version