Site icon The News Nest

২১ দিনের লকডাউন কী বাস্তব কোনও পরিকল্পনা? নাকি সবটাই মোদী করলেন নোটবন্দির স্মৃতি থেকে!

migrent

অমিতাভ মুখার্জি

করোনা যে কবে থেকে ভয় দেখানো থামাবে কেউ জানেনা।  চারিদিকে হরেক আতঙ্ক। ঘরে দিন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ।  খুব দরকার না থাকলে পারতপক্ষে কেউ বের হচ্ছেন না। কিন্তু যেভাবে লকডাউন  শুরু হয়েছে তাতে করোনা প্রাণ বাঁচিয়ে দিলেও খিদে ছাড়বে না। এই লকডাউন আরও একবার নোটবন্দির কথা মনে করিয়ে দিল। করোনাতে অবশ্য কারো হাত নেই।  তবে নোটবন্দিতে ছিল। নোটবন্দি ১০০-র বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছিল। কিন্তু তখন নির্বিকার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাজকর্ম দেখে অনেকেই তাঁর সঙ্গে জুনা খাঁ ওরফে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের তুলনা টানেন। তুঘলকের পরিকল্পনাও বেশ পাকাপোক্ত ছিল। কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় তিনি আমজনতার কথা গুরুত্ব তেমন দিতেন না। তাঁর কাছে সমস্যাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার সমাধান মানুযের কাজে এল কি এলোনা সেটা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাঁর পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী। তারপরও তাঁকে পাগলা রাজা বলেই আড়ালে আবডালে ডেকেছে আমজনতা । ইতিহাসবিদরা তাঁর বুদ্ধির তারিফ করেছেন। কিন্তু  বাস্তবতার নয়।

আরও পড়ুন : করোনায় আক্রান্ত কম্যান্ড হাসপাতালের এক চিকিৎসক, রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯

নরেন্দ্র মোদিকে এরকম কোনও রাজার সঙ্গে তুলনা করা হলে ভক্তরা রে রে করে উঠবেন। তাই এসব কথা না বলাই ভালো। ভারতের মতো দেশে ২১ দিনের লকডাউন যে কি মারাত্মক অবস্থা তৈরী করতে পারে তা তিনি নোটবন্দির মত এবারও বুঝে উঠতে পারেননি। ভক্তরা বলবেন তিনি তো দেশের মঙ্গলের জন্যেই এটা করছেন। তা নিয়ে প্রকৃতই কোনো প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। তুঘলকও প্রজা কল্যাণের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।  বাস্তবতাবিহীন সে সিদ্ধান্ত প্রজাদের জীবন বহু ক্ষেত্রে যন্ত্রনায় ভরে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বহুবার অরাজনৈতিক আলোচনায় বলেছেন তিনি ভীষণ গরিব ছিলেন। তাহলে তাঁর ভাবনায় গরিব মানুষরা জায়গা পায়না কেন, বোধগম্য হয় না।  যখনই তিনি জনগণের সামনে ভাষণ দিতে আসেন দেশবাসীর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।  কি জানি সে হয়তো উনি দেখতে ভালোবাসেন! হয়তো উনি নিজেকে মনে মনে রাজা ভাবতে ভালোবাসেন। একই সঙ্গে হয়তো নিজেকে চৌকিদার প্রচার করতেও ভালোবাসেন। কিন্তু তাঁর জমানায় ভারত একের পর এক ব্যার্থতা ছাড়া কিছু পেলোনা। প্রথম ইনিংসে তিনি নিজেই নোটবন্দি করে দেশের অর্থনীতির ১২ বাজিয়ে ছিলেন। এই দফাতে ঝিম ধরা অর্থনীতিকে ভেন্টিলেশনে পাঠিয়ে দিল করোনা।

ভক্তদের দাবি লাগাতার বিদেশভ্রমণ করে মোদীজি বিশ্বের কাছে ভারতকে চিনিয়েছেন। এটাই যদি আমাদের একমাত্র পাওনা হয় তবে তা মানপত্রে লিখে রাখা উচিত। মানপত্রের মত এমন গুছিয়ে  মিথ্যা বোধহয় আর কোথাও সেইভাবে লেখা হয় না।  অতিবড় হাড়েবজ্জাতের মানপত্র পড়লে তাঁকে দেবদূত বলে ঠাওর হয়। সবশেষে বলতে বাধ্য হচ্ছি এই লকডাউন ধীরে ধীরে বাড়ানো যেত।  দেশের অগণিত গরিব মানুষের কথা বিবেচনা করা যেত।  তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া দিল্লির আনন্দ বিহার বাস স্টপের ছবিটা বোধয় দেখতে হত না।

আরও পড়ুন : “শ্রমিকদের আটকাতে রাজ্য সীমানা বন্ধ করুন, নিশ্চিত করুন লকডাউন”, রাজ্যগুলিকে নির্দেশ কেন্দ্রের

নোটবন্দির সময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত নিজের সিদ্ধান্তেই ভুগেছিলো গোটা দেশ। তিনি বলেছিলেন ৫০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে যেকোনও শাস্তি তিনি মাথা পেতে নেবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি সেই ৫০ দিনে। তারপর ও তাঁর বহু মান- কি-বাত শুনেছে গোটা দেশ। এবার করোনার ২১ দিনের লকডাউন-এও দিশেহারা দেশবাসী। উপযুক্ত কোনও পদক্ষেপ ছাড়াই অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোটা দেশ। রবিবার জনগণের কাছে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

 

 

 

Exit mobile version