Site icon The News Nest

সন্তানদের নিয়ে ত্রাণের আকুতি ‘পরিযায়ী’ দুর্গার, শিল্পীর ভাবনাকে কুর্নিশ জানাল নেটনাগরিকরা

barisha

করোনা কালে দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের লং মার্চ দেখেছে ভারতবাসী। তাঁদের যন্ত্রণা-হাহাকার, ক্ষুধাক্লিষ্ট মুখ দেখে কেঁদেছে দেশবাসী। এবার সেই পরিযায়ীদের সংগ্রামকে অভিনব ভাবে শ্রদ্ধা জানাল কলকাতার নামী দুর্গোৎসব কমিটি বড়িশা ক্লাব। পরিযায়ী মা রূপী দেবী দুর্গা এবার মূল আকর্ষণ বেহালার ক্লাবের। সন্তান কোলে সেই পরিযায়ী মায়ের সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিমা শিল্পী। এবছর তাঁদের থিমের পোশাকি নামও সামঞ্জস্য রেখেই করা হয়েছে ত্রাণ। ত্রাণের খোঁজে পরিযায়ী মায়ের লড়াই দেখাবে বড়িশা ক্লাব।

শিল্পীর কল্পনায় সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরের বধূর বেশে ত্রাণভিক্ষা করতে হাজির হয়েছেন উমা। তাঁর কোলে কার্তিক। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশকে নিয়ে মণ্ডপে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুর্গা। যদি ত্রাণ পাওয়া যায়! কিন্তু তাঁকে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই। জবাব দিচ্ছে হচ্ছে প্রশ্নের— কোথায় যাচ্ছেন? কী দরকার? উত্তরে পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরনি উমা বলছেন, “মায়ের কাছে যাচ্ছি গো। ত্রাণ নিতে। ত্রাণ দেবে গো?” মায়ের সঙ্গেও লক্ষ্মী, সরস্বতী বলে উঠছেন, “ত্রাণ নিতে গো।” শিল্পী রিন্টু দাস পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি তৈরি করেছেন প্রতিমা এবং তার সঙ্গে শব্দের মায়াজাল বুনে। পুজোমণ্ডপে ঢোকার মুখে ঘোষণা শোনা যাচ্ছে, ‘‘আজ বিকেলে ত্রাণ দেওয়া হবে। ত্রাণ পাবেন। আসুন-আসুন।’’

আরও পড়ুন: ধর্মীয় উত্তেজনার ছড়ানোর অভিযোগ, কঙ্গনা ও রঙ্গোলির বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ আদালতের

শিল্পীর কথায়, “এই ছবিই তো দেখা গিয়েছিল শহর থেকে গ্রামের আনাচেকানাচে। দেশজুড়ে। খিদের জ্বালায় লম্বা লাইন দিতে হয়েছে ওঁদের। সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি।” মণ্ডপের ভিতরে ঢুকতেই ভিড়ের কোলাহল। হাঁকডাকের শব্দের মধ্যে কানে ভেসে আসছে, ‘‘লাইনে দাঁড়ান। ভিড় করবেন না। ধীরে ধীরে আসুন।’’ ত্রাণপ্রার্থীদের সামলাতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের গলায় বিরক্তির বহিঃপ্রকাশও তুলে ধরেছেন শিল্পী। উমার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ‘‘কোথায় যাচ্ছেন? কী দরকার।’’ শুনে উমা থমকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা।

রিন্টুর তত্ত্বাবধানে শিল্পী পল্লব ভৌমিক মায়ের মূর্তি বানিয়েছেন কৃষ্ণনগরের তাঁর স্টুডিয়োতে। তৈরি হয়েছে মায়ের অবয়ব। ঠিক ঘরের মেয়ের মতো। সনাতনী মূর্তির বদলে বাস্তবানুগ করা হয়েছে। সঙ্গে সন্তানসন্ততিরা। মায়ের পরনে শাড়ি রয়েছে। কিন্তু শিল্পী তাতে রঙ দেননি। সে শাড়ির রং মাটির। তাতে মাটির ছোঁয়া। মাটির গন্ধ। আমজনতার যেমন হয়। শিল্পীর মতে, বেরঙিন এই শাড়ি হল আসলে পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়ে ‘প্রতিবাদ’। তাঁর নির্মিত দেবী দুর্গার হাতে তাই অস্ত্র নয়, দশ হাতে থাকছে দশ রকমের ত্রাণসামগ্রী।

বড়িশা ক্লাবের এই দুর্গা ঝড় তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এদিন সকাল থেকেই ট্রেন্ড করতে শুরু করে বিষয়টি। জাতীয সংবাদ মাধমেও হয় খবর। শিল্পীর এই অভিনব ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।

আরও পড়ুন: আজ বাউল সম্রাট লালন শাহের ১৩০তম প্রয়াণ দিবস, বন্ধ আখড়াবাড়ির দরজাতেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

Exit mobile version