Site icon The News Nest

আর্থিক প্যাকেজ ৩.০-এর ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর: জোর কর্মসংস্থান তৈরিতে, বরাদ্দ অর্থ, আবাসনে আয়করে ছাড়

nirmala

মে মাসে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ ১.০। অক্টোবরে ২.০। আর বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করলেন আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ৩.০। করোনা অতিমারির মোকাবিলায় নতুন এই প্রকল্প ঘোষণা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। আগের দু’টি ধাপের আর্থিক প্যাকেজের জেরেই অর্থনীতির এই বৃদ্ধি বলে দাবি করেছেন নির্মলা। মোট ১২টি ক্ষেত্রে একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন নির্মলা।

তবে সেই ঘোষণার আগে নির্মলা দাবি করেন, ‘‘বিভিন্ন সূচক থেকে এটা স্পষ্ট যে, অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পূর্বাভাস দিয়েছে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার অনেকটাই বাড়বে। মুডিস (আর্থিক সমীক্ষাকারী সংস্থা) বৃহস্পতিবারই চলতি আর্থিক বছরের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস -৯.৬ থেকে -৮.৯ করেছে।’’ অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘‘সরকার সুসংহত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করেছে বলেই এই বৃদ্ধি হয়েছে।’’

এক নজরে দেখে নিন আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ৩.০- এর ঘোষণা :

১) কর্মসংস্থান তৈরি এবং সংগঠিত ক্ষেত্রে রোজগার নিশ্চিত করার জন্য ‘আত্মনির্ভর রোজগার যোজনা’-র ঘোষণা করা হচ্ছে। যে কর্মীরা ইপিএফওয়ের আওতায় ছিলেন না এবং ১ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাঁরা কর্মীরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের যে সংস্থাগুলি নিয়োগ করবে, তারা এই সুবিধা পাবে। সেই সংস্থাগুলিকে ইপিএফওয়ের কাছে নথিভুক্ত থাকতে হবে। ১ অক্টোবর থেকে যে সংস্থাগুলি এরকম কর্মীদের নিয়োগ করবে, তাঁরা আগামী দু’বছরের জন্য সেই সুবিধা পাবে। তবে কর্মীদের মাসিক বেতন ১৫,০০০ টাকার কম হবে।

২) দুটি শর্তে দেওয়া হবে। প্রথমত, যে সংস্থার ৫০ জন কর্মী আছেন, তাঁদের ন্যূনতম দু’জন নয়া কর্মী থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৫০ জনের বেশি কর্মী থাকলে তাহলে নয়া কর্মীর সংখ্যা হবে ন্যূনতম পাঁচজন। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই যোজনা চালু থাকবে।

৩) দু’বছরের জন্য নয়া কর্মীদের জন্য ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র। যে সংস্থাগুলিতে ১,০০০ জন পর্যন্ত কর্মী আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ অর্থ দিতে হবে কর্মীদের। ১২ শতাংশ দেবে সংস্থা। এই ২৪ শতাংশ টাকা কেন্দ্র ভর্তুকি দেবে। যে সংস্থাগুলিতে ১,০০০ জনের বেশি কর্মী আছেন, তাঁদের শুধু কর্মীদের ১২ শতাংশের ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র। যাতে সংস্থাদের উপর কম বোঝা যাবে। শুধু আধারের সঙ্গে ইপিএফও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

৪) আত্মনির্ভর ভারতের আওতায় ক্রেডিট লাইনের ঘোষণা করা হয়েছিল, তা বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি শিল্পের জন্য সেই ঋণের ঘোষণা করা হয়েছিল, তা বাণিজ্য সংস্থা, ব্যবসার জন্য ব্যক্তিগত ঋণ এবং মুদ্রা গ্রাহকদেরও সেই ঋণের আওতায় আনা হয়েছিল।

৫) কামাথ কমিটির চিহ্নিত ২৬ টি ক্ষেত্র এবং স্বাস্থ্য খাতের সংস্থাগুলির জন্য অর্থ সাহায্য করা হবে। তাতে সুদের হার নির্ধারিত থাকবে।

আরও পড়ুন: বিহারে সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ, এক নম্বরে তেজস্বীর দল

৬) লকডাউনের আগেই তিনটি ক্ষেত্রকে উৎপাদন সংক্রান্ত বিশেষ উৎসাহ বা ইনসেনটিভ প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। বুধবার আরও ১০ টি ক্ষেত্রকে যুক্ত করা হয়েছে। ১.৪৬ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার ফলে ঘরোয়া উৎপাদন চাঙ্গা হবে। তাতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী।

৭) অত্যাধুনিক রাসায়নিক সেল ব্যাটারি (১৮,১০০ কোটি টাকা), বৈদ্যুতিন বা প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম (৫,০০০ কোটি), অটোমোবাইল ও গাড়ির সরঞ্জাম (৫৭,০৪২ কোটি টাকা), ওষুধ (১৫,০০০ কোটি টাকা), টেলিকম এবং নেটওয়ার্কিং পণ্য (১২,৯১৫ কোটি টাকা), বস্ত্র (১০,৬৮৩ কোটি টাকা), খাদ্যদ্রব্য (১০,৯০০ কোটি টাকা), উচ্চক্ষমতার সৌরযন্ত্র (৪,৫০০ কোটি টাকা), শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র-সহ বিভিন্ন পণ্য (৬,২৩৮ কোটি টাকা) এবং বিশেষ ইস্পাত (৬,৩২২ কোটি টাকা) ক্ষেত্রে সেই প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে।

৮) নির্মাণ এবং পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে অনেক সময় সংস্থাগুলিকে বেশি ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে হত। এবার তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ইএমডি দিতে হবে না। পরিবর্তে কার্যত ‘সিকিউরিটি ডিক্ল্যারেশন’-এর মতো দিতে হবে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটির মেয়াদ থাকবে।

৯) আবাসন ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরি এবং বাড়ি কিনবেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বড় ঘোষণা করা হচ্ছে। আয়কর আইন অনুযায়ী, সার্কেল রেট এবং এগ্রিমেন্ট ভ্যালুর মধ্যে ১০ শতাংশ পার্থক্য ছিল। কিন্তু আসল দাম তার থেকে কম হত। এবার তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। তার ফলে লাভবান হবেন মধ্যবিত্তরা। চাঙ্গা হবে আবাসন ক্ষেত্র।

১০) ভর্তুকিযুক্ত সারের ক্ষেত্রে ৬৫,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হচ্ছে।

১১) পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১১৬ জেলায় প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা চলছে। সেজন্য ইতিমধ্যে ৩৭,৫৪৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে ২৫১ কোটি মানুষের কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্র যাতে সমস্যার মুখে না পড়ে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় আরও ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০০ দিনের কাজের জন্য এবারের বাজেটে ৬১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে আরও ৪০,০০০ কোটি টাকা দেখা হয়েছিল।

১২) রফতানি চাঙ্গা করতে এগজিম ব্যাঙ্ককে আরও ৩,০০০ কোটি টাকার লাইন অফ ক্রেডিট হিসেবে দেওয়া হল।

১৩) মূলধনী এবং শিল্প খাতে ব্যয়ের জন্য অতিরিক্ত ১০,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। তার ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, শিল্পের পরিকাঠামো ভারতেই তৈরি হয়।

১৪) করোনাভাইরাস টিকা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে যাবে। পাবে কেন্দ্রীয় সরকারের জৈবপ্রযুক্তি দফতর। কোভিড সুরক্ষা মিশনের আওতায় তা দেওয়া হবে।

১৫) আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আওতায় এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ আর্থিক প্যাকেজের (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার পদক্ষেপ নিয়ে) ঘোষণা করা হয়েছে, তা জিডিপির ১৫ শতাংশ। আর কেন্দ্রের শুধু ধরলে তা জিডিপির ন’শতাংশ। সবমিলিয়ে ২,৯৮৭,৬৪১ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের গর্ব’, কমলা হ্যারিসের জয়ে চোখে জল তামিলনাড়ুর এই গ্রামের বাসিন্দাদের

Exit mobile version