সৈয়দ আলি মাসুদ
পরিযায়ীরা ফিরছেন। ফিরবেনই তো। নিজের বাড়িতে মানুষ ফিরবে এটাই তো স্বাভাবিক। যদিও সেটা স্বভাবিকভাবে হল না। বেচারিদের খুব কষ্ট হল। বেঘোরে প্রাণ গেল কতজনের। কারও কারও কাছে তা অবশ্য তুচ্ছ ঘটনা। যাকগে সেসব কথা।
একথা ঠিক যে পরিযায়ীরা ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সংক্রমণ। কিন্তু তা বলে ওদের ভিলেন ঠাউরাবেন না প্লিজ। ওরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে চাইছেন না। দেখুন প্রাণের ভয় সবার রয়েছে। পাগল ছাড়া। কিন্তু দেশ জোড়া কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলোর যে হাল তাতে সেখানে থাকা প্রায় অসম্ভব। গড়পড়তা সব রাজ্যের হাল একই।রাজনীতির লোক ছাড়া একথা বোধকরি সকলে স্বীকার করবেন।
এখানে বিজেপি শাসিত, অবিজেপি শাসিত বলে কিছু নেই। রাজনেতাদের সুবিধা রয়েছে। তারা সবকিছু রাজনীতির চশমায় দেখেন। ফলে সেখানে দলই শেষ কথা।মানুষ নয়। বিচিত্র এই দেশে কোরোনার থেকেও মারাত্মক হল কোয়ারেন্টাইন।
এদেশের লোক পুলিশি হুজ্জত এড়িয়ে কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করেও সালিশ করে নেয়। কারণ পুলিশ একবার ধরলে কবে ছাড়া মিলবে ঠিক নেই। আদালত তো সাধারণ মানুষের কাছে আরও মারাত্মক শব্দ। বিচার পেতে এখানে ধনে-প্রাণে শেষ হয়ে যেতে হয়। তারপরও সুবিচার মেলে কদাচ।
সত্যি কথা বলতে কি এদেশের মানুষ কোনো সরকারকেই বুক ঠুকে বিশ্বাস করতে পারেনি। অপপ্রচার কে হাতিয়ার করে কম বেশি সব সরকারই টিকে রয়েছে। কাউকে আলাদা করে দোষ দেওয়ার অর্থ আপনি করো দোষ কম দেখাতে চাইছেন। তা না হলে সকলে একই। ফারাক শুধু রং-এ, পার্থক্য কেবল প্রচারের ভাষায়।
এই কিছুদিন আগে এনআরসির আতঙ্কে কতজন আত্মঘাতী হয়েছিলেন। হয়ত তাদের মনে হয়েছিল, এই দেশ থেকেই যখন চলে যেতে হবে তখন বেঁচে থেকে আর লাভ কি। একটা প্রবল শক্তি এই মানুষগুলোর মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা হয়তো হতে পারত। কিন্তু কে করবে ? আর সেসব কাসুন্দি ঘেঁটে কি লাভ। ওই ইস্যু আপাতত হিমঘরে। সময় মত অবশ্যই বের হবে।
এদেশ যদি ঠিকমত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার দিতে পারত, তাহলে হয়ত করোনার সংক্রমণ খানিকটা রোখা যেত। যারা প্রশাসনের তৎপরতায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গিয়েছেন তারা মোক্ষম টের পেয়েছেন কোয়ারেন্টাইন কারে কয়?
সেখানকার ভয়াবহ অব্যবস্থার দিনগুলি কারাগার কাটানোর থেকে কোনো অংশে কম ভয়ংকর নয়। নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেওয়া যে ভাল তা কী কেউ বোঝেন না ? সকলের মোক্ষম ধারণা রয়েছে। কিন্তু কারাগারের অধিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলির কারণে অনেকের মনে হয়েছে এর থেকে করোনা ভাল। এক্ষেত্রে আরও একটি কথা না বললেই নয়। সেটি হল, করোনা পজিটিভ, নাকি নেগেটিভ তা ঠাহর করতেই বহুদিন কাবার। ততদিনে কারাগার সদৃশ কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কাটিয়ে অনেকে জেনেছেন তাদের কোভিড নেগেটিভ। সরকারি আনুকূল্যে সাধারণ মানুষ তাই বুঝে উঠতেই পারলেন না করোনা বেশি মারাত্মক না কি প্রশাসনিক উদ্যোগে তৈরী হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার!
—অভিমত ব্যক্তিগত
আরও পড়ুন: এবার ঘ্রাণশক্তি দিয়ে করোনা রোগী শনাক্ত করবে কুকুর! ব্রিটেনে শুরু গবেষণা