Site icon The News Nest

হুকে বিঁধিয়ে মৃতদেহ উঠছে পুরসভার গাড়িতে, গড়িয়া শ্মশানের ভিডিয়োয় ছড়াল চাঞ্চল্য

daad body van

ওয়েব ডেস্ক: বুধবার কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির গড়িয়া আদি শ্মশানের এক ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গলায় হুক বিঁধিয়ে দেহ টানতে টানতে এনে কলকাতা পুরসভার গাড়িতে তুলছেন এক ব্যক্তি। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপালও।

শ্মশানের ভিতর দাঁড়িয়ে কলকাতা পুরসভার গাড়ি। একের পর এক মৃতদেহ মাটিতে ঘষটে টেনে তোলা হচ্ছে সেই গাড়িতে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কিছু মানুষ।

বুধবার রাত থেকেই এ রকম একাধিক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেই ভিডিয়ো ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রাজ্যপাল থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধীরা— সকলেই মুখ খুলেছেন এই প্রসঙ্গে। বিক্ষোভকারীদের একাংশের অভিযোগ, পুরসভার গাড়িতে করোনা আক্রান্তদের দেহ পোড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই শ্মশানে। যদিও সেই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

আরও পড়ুন : এলাকা দখলের লড়াই, বর্ধমানে গোষ্ঠী সংঘর্ষে নিহত যুবক

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, সেটি গড়িয়ার বোড়াল শ্মশান। কলকাতা পুলিশের বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার অন্তর্গত। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পরনে গামছা এবং পায়ে গামবুট পরে কয়েকজন ডোম শ্মশানের ভিতর থেকে মৃতদেহগুলির গলায় দড়ি বা লোহার আঁকশি জাতীয় কিছু দিয়ে মাটিতে ঘষটে টেনে পুরসভার গাড়িতে তুলছেন। প্রত্যেকটি দেহেই পচন ধরে গিয়েছে, চামড়া-মাংস খুলে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে।

জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে NRS হাসপাতালের মর্গ থেকে ১৪টি বেওয়ারিশ দেহ গড়িয়া শ্মশানে সৎকারের জন্য পাঠানো হয়। এরই মধ্যে করোনায় মৃতদের দেহ পোড়ানো হচ্ছে বলে গুজব ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয়রা শ্মশানের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তাদের আশ্বাসেও বিক্ষোভ থামেনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর চয়ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দু’ সপ্তাহ আগে তাঁকে শ্মশানের তরফে জানানো হয়েছিল যে এখানে দাবিদারহীন দেহ দাহ করা হবে। স্থানীয় মানুষের তীব্র আপত্তিতে তিনি শ্মশানের অফিসে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে প্রতিবাদ জানান।

মঙ্গলবার ফের শ্মশানের অফিসকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এ বার থেকে দাবিদারহীন দেহ দাহ করতে এই শ্মশানের তরফে কোনও আপত্তি যেন করা না-হয়। শ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দিলীপ কুমার শীট বলেন, এই শ্মশানে দুর্ঘটনায় মৃত বা অস্বাভাবিক ভাবে মৃত বা দাবিদারহীন দেহ দাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সেগুলো করোনা রোগীর দেহ নয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গ তুলে একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের সমাজে মৃতদেহকে সম্মান দেখানোটাই রীতি। যে ভাবে ওই দেহগুলি দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা অবর্ণনীয় এবং অসংবেদনশীল। গোটা বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।” পরে তিনি বিকেলের দিকে ফের টুইট করেন। সেখানে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে তিনি এ বিষয়ে জবাব পেয়েছেন। রাজ্যপাল ওই টুইটে দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রসচিব মেনে নিয়েছেন, ওই দেহগুলি দাহের ক্ষেত্রে সঠিক বন্দোবস্ত করা হয়নি। রাজ্যপালের দাবি, ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহ দাহ করা হবে বলেও তাঁকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। 

ঘটনাটি গত বুধবার ওই শ্মশানে ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে কলকাতা পুরসভার একটি শববাহী গাড়ি শ্মশানে ঢোকে। তার পর একের পর এক দেহ নামানো শুরু হয়। পচা-গলা দেহ হওয়ার গোটা এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে শ্মশানে ছুটে আসেন এলাকার মানুষ। তাঁরা জানতে পারেন, পুরসভার গাড়িতে করে একাধিক পচাগলা দেহ নিয়ে আসা হয়েছে সৎকারের জন্য। সেই দেহ থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর পর তাঁরা শ্মশানের মূল দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুরসভার কর্মীরা শ্মশান থেকে ফের দেহগুলি তুলে নিয়ে চলে যান। ওই দেহগুলি কাদের এবং কোথা থেকে এল তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দেহগুলি করোনা আক্রান্তদের।

আরও পড়ুন : দেশের সেরা কলেজের প্রথম দশে জেভিয়ার্স-রামকৃষ্ণ মিশন,সাতে-পাঁচে রইল কলকাতা-যাদবপুর

Exit mobile version