Site icon The News Nest

নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরই জনসভায় মমতা, বিচারের ভার ছাড়লেন জনতার হাতে, বললেন পলাশির গল্প

didi

২৪ ঘণ্টা আপাতভাবে ক্রিয়াহীন। কারণ, নিষেধাজ্ঞা চলছিল। তাই নির্বাচনী প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু কমিশনের নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টা পেরতেই এক মিনিটও সময় নষ্ট নয়। দিনের শেষবেলায় সন্ধে ৮টার পর জোড়া সভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বারাসতে তৃণমূল প্রার্থী চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর সমর্থনে সভা থেকে অবশ্য প্রথমেই তিনি এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন। বললেন, ”আমার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আর বিজেপি নেতারা রোজ এসে প্রচার করে যাচ্ছে। এর বিচারের ভার আমি জনগণের হাতে ছেড়ে দিলাম। ওঁরাই এর বিচার করবেন।” তাঁর এই কয়েকটা কথাই যেন পুরো জনসভার মূল নির্যাস হয়ে দাঁড়াল। ভোকাল টনিক পেয়ে চাঙ্গা দলীয় কর্মী থেকে আমজনতা – সবাই।

অন্য দিনগুলির উত্তেজনা নেই চেহারায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেমে থেমে প্রশ্ন রাখলেন,  আমাকে সর্বতো ভাবে আটকানোর প্রচেষ্টা চলছে কেন? কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন প্রশ্ন রেখে, অর্থাৎ এই প্রশ্নের উত্তর  খোঁজার ভারও তিনি ছাড়লেন উপচে পড়া সভায় উপস্থিত আমজনতার উপর। কথায় কথায় বাংলার এই ভোটযুদ্ধকে পলাশির সঙ্গে তুলনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেকে তুলে ধরলেন একজন স্ট্রিটফাইটার হিসেবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “রাঘববোয়াল থেকে চুনোপুটি, ভারতসরকারের যত এজেন্সি সব ব্যবহার করে বাংলা দখলের অশুভ প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাকে গুজরাট করতে দেবো না। আমাকে আটকানোর চেষ্টা করলে লাভ নেই। আঘাত করলে প্রত্যাঘ্যাত করতে পারি।” আরও একবার জনতার উদ্দেশে ধেয়ে এল প্রশ্ন, “আমাকে এত ভায় পাচ্ছে কেন ওরা? এবার অবশ্য উত্তর ফেরালেন নিজেই। বললেন, “তোমাদের কাছে লোকলস্কর আছে, টাকা পয়সা আছে। ভারত সরকারের এজেন্সি নিয়ে নেমেছো। আমাকে এত ভয় পাচ্ছো কারণ একটাই।”

আরও পড়ুন: ‘ফাইটার’ মমতার অভিনব প্রতিবাদ, ফের প্রচারের সব আলো কেড়ে নিলেন নেত্রী

কারণ হিসেবে উঠে এল পলাশির গল্প। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে থাকেন, “স্বামী বিবেকানন্দ একবার বেনারস থেকে ফিরছিলেন। তাঁর এক ইংরেজ বন্ধুকে তিনি প্রশ্ন করেন, ভারতের কাছে লোকলস্কর অস্ত্রশস্ত্র ছিল, তবু পলাশিরর যুদ্ধ জিততে পারল না কেন? ওই ইংরেজ বন্ধু তাঁকে পাল্টা বলেন,  আপানাদের সব ছিল কিন্তু নেতা ব্যাটেলফিল্ডে ছিল না।” মমতার ব্যখ্যা, আমি ব্যাটলগ্রাউন্ডে থেকে লড়াই করি। সেই কারণেই আক্রমণ-বোঝাতে চাইলেন তিনি। নিজেকে বারংবার তুলে ধরলেন স্ট্রিটফাইটার হিসেবে।

এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধতে গিয়ে বর্ধমান থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিহিদানা নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। বলেছিলেন, ”দিদি, আপনার কি মিহিদানা পছন্দ না? তাহলে আপনার এত তিক্ততা কেন?” বারাসত থেকে তার জবাব দিতে গিয়ে শক্তিগড়ের ল্যাংচার কথা উল্লেখ করলেন তিনি। তাঁর পালটা খোঁচা, ”বর্ধমানের ল্যাংচা খেয়েছেন কখনও? ল্যাংচা খাননি বলই তো ল্যাংচাতে হচ্ছে। জানেন, কীভাবে মিহিদানা তৈরি হয়?” রাজ্যে ৮ দফা নির্বাচনের প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী জনসভা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়ে আগেও একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এও জানিয়েছিলেন, মোদি সভা করছেন বলেই তিনিও ভোটের দিনগুলোয় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকছেন। এদিনের জনসভায় বললেন, ”প্রত্যেক ভোটের দিন সভা করতে আসছেন।দরকার হলে, কমিশন যদি বলে, আমি ওই দিন সভা করব না।”

কথায় কথায় এল এনআরসি এবং অমিত শাহের প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, “আজ লেবংয়ে গিয়ে বলছে এনআরসি-র কথা বলিনি, এনআরসি করেছে কি করেনি. ১৪ লক্ষ লোককে নাগরিকত্ব থেকে কারা বাদ দিল!”

২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা উঠতে মমতাকে পাওয়া গেল স্বমহিমায়, আরও তীক্ষ্ণ হল অভিমুখ। আজ তাঁর শীতলকুচি যাত্রা নতুন করে রাজনৈতিক তরজার জন্ম দেবে নিশ্চিত। মমতা প্রস্তুত হচ্ছেন আঘাত এবং প্রত্যাঘাতের জন্য।

আরও পড়ুন: শুভেন্দুর জবাবে সন্তুষ্ট নয় কমিশন, নিষেধাজ্ঞা না চাপিয়ে করা হল সতর্ক

Exit mobile version