Site icon The News Nest

ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়ার অভিযোগ, মমতাকে নোটিস নির্বাচন কমিশনের

didi

তারকেশ্বরে নির্বাচনী প্রচারে মুসলিমদের উদ্দেশে ভোট-বার্তা দিয়ে বিপাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি অভিযোগ জানানোর পর এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই নোটিস দিয়ে তাঁর কাছে জবাব জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোট চেয়েছেন? এই প্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি যদি জবাব না দিতে পারেন সেক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মমতার মন্তব্যে ‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে’ বলে সেই নোটিসে উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নোটিশে বলা হয়েছে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, গতচ ৩ এপ্রিল হুগলির তারকেশ্বরে এক সভায় নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি সংখ্যালঘু ভাইবোনেদের কাছে হাত জোড় করে বলছি, বিজেপির কাছ থেকে যে শয়তানরা টাকা নিয়েছে তাদের কথা শুনে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ভাষণ সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে। যা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়ার শামিল।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলাকালে রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে মমতার এই ভাষণের প্রসঙ্গ তোলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ভোটপ্রচারে সরাসরি মুসলিমদের একজোট হওয়ার কথা বলছেন দিদি। বলছেন, মুসলিম ভোট যেন ভাগ না হয়। আর এর উলটোটা যদি আমরা বলতাম। যদি বলতাম, হিন্দু ভোট যেন ভাগ না হয়, তাহলে কমিশনের আট দশটা নোটিশ এতক্ষণে চলে আসতো।  ঘটনাচক্রে, মোদীর সভার পরের দিনই নির্বাচন কমিশনের নোটিস এল তৃণমূলনেত্রীর কাছে।

আরও পড়ুন: পদ্মে ভোট দিলেই মিলছে কড়কড়ে ১০০০ টাকা! অভিযোগ তৃণমূলের

বলে রাখি, ভারতীয় নির্বাচনী বিধিতে ধর্ম বা জাতির ভিত্তিতে ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ। কোনও প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের সদস্য তা করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে কমিশনের। যদিও বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা প্রায়শই এই কাজ করে থাকেন। সদ্য বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী প্রায়শই মমতা ব্যানার্জিকে ‘বেগম’ বলে কটাক্ষ করে থাকেন। যেন হিন্দু ভোট পেতে মুসলিমদের ঘৃণা করা আবশ্যিক। তবু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নোটিশ আসে না তাঁর নামে।

২৯ মার্চ ২০২১ নন্দীগ্রামে একটি প্রকাশ্য জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন: “যদি বেগম ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে রাজ্য মিনি পাকিস্তানে পরিণত হবে। নিয়মিত ‘ঈদ মুবারক’ বলা মমতার স্বভাব। এমনকি দোল উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতেও তিনি ‘হোলি মুবারক’ বলেন.. ওনারা বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ জিতলে সেখানে বাজি ফাটানো, মিষ্টি বিতরণ আর মাংস খাওয়া হয়। আপনারা কি এদের হাতে নন্দীগ্রামকে তুলে দিতে চান? ভেবে দেখুন…. “। এখানে শুভেন্দু সরাসরি একটি বহুল প্রচলিত উর্দু শব্দ ‘মুবারক’-এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ওগড়াচ্ছেন আর মিথ্যা ভয় ছড়াচ্ছেন যে মমতা ব্যানার্জি জিতলে মুসলিমরা রাজ্য দখল করে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করবে।

ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্তানের সাথে গুলিয়ে দিয়ে তারা ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করে এই ভুয়ো প্রচার মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানোর একটি বহুল ব্যবহৃত হাতিয়ার। বিরোধী দল তৃণমূলের বেশ কিছু মুসলিম নেতার নাম করেও শুভেন্দু ঘৃণা উসকে দেওয়ার কাজ করেছেন। তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের নাম নিয়ে শুভেন্দু বলেছেন “ম্যাডাম জিতলেও, তারপরেই এখান থেকে হাওয়া হয়ে যাবে। আপনাদের সব কাগজ পত্রের কাজ করতে তখন যেতে হবে সুফিয়ানের বাড়ি। মহিলাদের পক্ষে সুফিয়ানের বাড়ি যাওয়া কি আদৌ নিরাপদ? কারোর পক্ষেই কি নিরাপদ?” শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে একজন রাজনৈতিক নেতাকে মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক বলে দাগিয়ে দেওয়া চরম সাম্প্রদায়িক।

৭ মার্চ, ২০২১-এ দেওয়া একটি বক্তব্যে শুভেন্দু অধিকারী আবারো উর্দু ঘেঁষা শব্দ ব্যবহার করে বোঝাতে চান যে মুসলিমদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট পাওয়া উচিত নয়। মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বলেন, “এখানে কেউ মমতাকে বাংলার মেয়ে হিসেবে স্বীকার করে না। মমতা হল অনুপ্রবেশকারীদের ‘ফুফু’ আর রোহিঙ্গাদের খালা।” রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে ভোট কুড়োনোর চেষ্টাও এখানে লক্ষ্যণীয়।

আরও পড়ুন: বিজেপি ‘অশান্তি’ আনবে! বেফাঁস টুইট করে হাসির খোরাক দলবদলু প্রার্থী

 

Exit mobile version