Site icon The News Nest

নন্দীগ্রামে ঘরের মেয়ে হয়ে উঠলেন মমতা, কাপে করে স্থানীয়দের দিলেন চা, দেখুন ভিডিয়ো

nandigram 5

কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরের নন্দীগ্রাম কেন্দ্রকে এবার বেছে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিপরীতে তাঁরই একসময়ের সেনাপতি এবং অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাই একুশের নির্বাচনে বাংলার অন্যতম ফোকাস নন্দীগ্রাম (Nandigram) বিধানসভা কেন্দ্র।

বিরোধী দলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একাধিকবার গিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে এই প্রথম নন্দীগ্রামের মাটিতে পা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ঘরের কাছেই ছিল নিরাপদ আশ্রয়। হাসতে হাসতে ভবানীপুরেই দাঁড়াতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা করেননি। বরং যে জমি আঁকড়ে লড়াই শুরু করেছিলেন, সেখানেই দলের ‘জমিরক্ষা’র দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিন্তু নন্দীগ্রামের মানুষের অনুমতি না পেলে, এগোবেন না তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই বক্তৃতা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, নন্দীগ্রামবাসী আপত্তি জানালে এক মুহূর্তও নষ্ট না করে কলকাতায় ফিরে যাবেন।

বাংলাকে পাখির চোখ করা বিজেপিকে বহিরাগত বলে দাবি করে আসছে তৃণমূল। কিন্তু নন্দীগ্রামে সেই মমতার বিরুদ্ধেই বহিরাগত বলে পোস্টার পড়েছে। যা নিয়ে মঙ্গলবার অভিমানী মমতার মন্তব্য, “কেউ কেউ বলছে আমি নাকি বাইরের লোক। আমি বাংলার লোক বাইরের লোক হয়ে গেলাম ভাই? আমি যদি বহিরাগত হতাম তাহলে এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হতাম না।”

 

প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর নন্দীগ্রামে মমতার প্রথম কর্মিসভায় সাধারণ মানুষও জমায়েত করেছিলেন। তাঁদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘কর্মীদের বলছি, আপনারাই দলের সম্পদ। কাল আমার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন। আপনারা যদি মনে করেন নন্দীগ্রাম থেকে আমার দাঁড়ানো উচিত নয়, তা হলে আজই বলে দিন। চলে যাব আমি। আর যদি মনে করেন আমি ঘরের মেয়ে, আপনাদের আন্দোলনের লোক, তা হলেই কাল মনোনয়ন জমা দিতে যাব। আমি জোর করে কিছু করি না। আপনাদের অনুমতি পেলে তবেই মনোনয়নপত্র জমা দেব।’’

নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কারণ খোলসা করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে কেন দাঁড়ালাম আমি? ভবানীপুর তো আমার ঘরের কেন্দ্র। কিছুই করতে হত না। রোজ সেখানে যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু শেষ বার যে দিন এসেছিলাম, সেই সময় এখানে কোনও বিধায়ক ছিল না। পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। নন্দীগ্রামের আসনটি খালি পড়ে ছিল। তখন আপনাদের সামনেই বলেছিলাম, নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ালে কেমন হয়। দেখতে চেয়েছিলাম, কী বলেন আপনারা। আপনারা বললেন, খুব ভাল হয়। আপনাদের সেই সাহস, উদ্দীপনা, সম্মান, মা-বোনেদের ভালবাসা, ছাত্র যৌবনদের উদ্দীপনা, সংখ্যালঘুদের ভালবাসা, হিন্দু-মুসলিম সব শ্রেণিকে সুন্দর ভাবে দেখে গিয়েছিলাম। নন্দীগ্রাম আমার দু’চোখ। আমি বার বার বলি, ভুলতে পারি সবার নাম, ভুলব নাকো নন্দীগ্রাম। তাই নন্দীগ্রামকে বেছে নিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: ‘বাংলায় কোনও বোমা কারখানা নেই’, RTI দেখিয়ে অমিত শাহের ‘মিথ্যা’ ধরল তৃণমূল

তবে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর কথা এক দিনে তাঁর মাথায় আসেনি, বরং সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম, জমি আন্দোলনের দুই ভূমের মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়ার চিন্তা শুরু থেকেই তাঁর মাথায় ছিল বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘জীবনের অনেকটা সময় সিঙ্গুরের জমি নিয়ে আন্দোলন করেছি। আগে ওখানে আন্দোলন শুরু হয়, তার পর নন্দীগ্রামে। ৪ ডিসেম্বর থেকে সিঙ্গুরে বসেছিলাম। নন্দীগ্রামে মিছিল-হাঙ্গামা হয় ৭ জানুয়ারি, ১৪ নার্চ, তার পরে ডিসেম্বরে। প্রত্যেকটা ঘটনা জানি। সিঙ্গুর না হলে নন্দীগ্রামের আন্দোলনে তুফান আসত না। মনে রাখবেন, কৃষি এবং জমি রক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামকে যুক্ত করে দিয়েছিলাম আমি। এ বার শুরু থেকেই মাথায় ছিল হয় সিঙ্গুর, নয় নন্দীগ্রাম, যে কোনও এক জায়গায় দাঁড়াব। কারণ এই দুই জায়গাই আন্দোলনের পীঠস্থান।’’

সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেছেন ভোট মিটলে প্রতি তিন মাসে অন্তর নন্দীগ্রামে আসবেন। নন্দীগ্রাম করে তুলবেন ‘মডেল নন্দীগ্রাম’ হিসেবে। আপাতত নন্দীগ্রামে থাকার জন্য দুটো বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। তবে তিনি যে পাকাপাকি ভাবেই থাকতে চান সে কথাও বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। জানিয়েছেন, পরে কুঁড়েঘর বানিয়ে নেবেন নন্দীগ্রামে।

এদিন কর্মী সম্মেলনের পর চণ্ডী মন্দির, পারুল মন্দির, পীরস্থান মাজারে যান মমতা। শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও করেন। জানকীনাথ মন্দিরে যাওয়ার আগে রাস্তার ধারে একটি চা-দোকানে চলে আসেন মমতা। সেখানে নিজে চা খান। অন্যদেরও চা তৈরি করে দেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের দোকানে দেখে উচ্ছ্বাস সামলে রাখতে পারছিলেন না সেই চা-দোকানের মালিক। মমতাকে বলেন, ‘আপনি আমার দোকানে এসেছেন, তাতেই আমি খুশি।’

আরও পড়ুন: বিজেপির নিজের ঘরেই আগুন, সংঘের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীরর

Exit mobile version