কলকাতা: ‘বয়েস লকার রুম’–এর মত ঘটনা এবার ঘটল খোদ কলকাতা শহরে।’বয়েস লকার রুম’–একটি সোশ্যাল সাইট গ্ৰুপ। দিল্লির বেশ কয়েকটি নামজাদা স্কুলের পড়ুয়া এই গ্ৰুপের সদস্য। তারা তাদের গ্ৰুপে মেয়েদের ছাত্রীদের ধর্ষণ নিয়ে নানা কথা আলোচনা করত। কিভাবে ধর্ষণ করতে হয়। ছাত্রীদের কীভাবে গণধর্ষণ করতে হবে , মূলত তাই ছিল এই গ্ৰুপের চর্চার মূল বিষয়।
আইয়ুব্রোজ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারির অভিযোগ, কলকাতার কিছু পুরুষ গুগল ড্রাইভ থেকে অর্ধ-নগ্ন ও নগ্ন মেয়েদের ছবি নিয়ে তা তাদের বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ওই টুইটে এও বলা হয় যে কুখ্যাত ইনস্টা গ্রুপ ‘বয়েস লকার রুম’-এর কার্যকলাপের সঙ্গে মিল রয়েছে এইসব পুরুষদের কার্যকলাপেও।
ওই টুইট অনুযায়ী ওইসব মেয়েদের ছবি তাঁদের অনুমতি ছাড়াই ড্রাইভে রাখা হয়েছিল এবং অতীতে তাঁদের হুমকি দেওয়ার জন্য তা ব্যবহার করা হয়েছিল। একগুচ্ছ টুইটে এও বলা হয়েছে এই গুগল ড্রাইভ তৈরি করার পরিকল্পনা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক পড়ুয়া। ওই পড়ুয়া তার কিছু বন্ধু যারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তাদেরকেও গুগল ড্রাইভে ছবি নেওয়ার জন্য প্রবেশের অনুমতি দেয়।
আরও পড়ুন: মদের ব্যাকুলতায় ঘাম ছুটল রাজ্যের, আপাতত বন্ধ অনলাইন অর্ডার
আইয়ুব্রোজ জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে জেইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রকে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত ছবি তিনি পাঠান। সেই সময় তাঁরা দু’জনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আইয়ুব্রোজ যখন ওই ছাত্রকে ক্রমাগত তাঁর ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতো তখন মনে করেছিল যে ওই ছবি নয় ফোন থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে আর নয়ত বা তা ব্যক্তিগতভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। আইয়ুব্রোজ জানান যে তিনি প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে ছবি শেয়ার করতে যখন অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তখন তিনি সব যোগাযোগ তার সঙ্গে বন্ধ করে দেন। ওই মহিলা বলেন, ‘আমি যে ছবি পাঠিয়েছি তা আমি কাউকেই জানাইনি। এর দু’বছর পর কেউ আমাকে জানায় যে ওই ছবিগুলি নাকি সে দেখেছে। ২০১৮ সালে আমারই এক সহপড়ুয়া মিটু স্টোরি পোস্ট করেন এবং সেখানে আমি তাঁকে সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে লিখি যে কিছু বিষাক্ত পুরুষ এখনও রয়েছে। এই কথোপকথনের সময় আমার বান্ধবী আমায় জানায় যে সে আমার ওই ছবি সম্পর্কে জানে। আমি অবাক হযে যাই, কারণ কলেজের কাউকেই এ বিষয়ে আমি জানাইনি।’
এরপর ওই ছাত্রীর নজরে আসে যে ওই পড়ুয়া তাঁর কোনও ছবি ফোন থেকে সরায়নি বরং বহু লোক ওই ছবি দেখেছে এবং তাঁর অনেক বন্ধুরাই সেই ছবি অন্যদের মাধ্যমে দেখেছে। আইয়ুব্রোজ লক্ষ্য করেন যে তাঁর ছবি তাঁর সম্মতি ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘আমার সহপড়ুয়ারা এই ছবি দেখেছে আর আমায় জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি।’ অন্য এক মহিলা দাবি করেছেন যে ওই প্রাক্তন পড়ুয়া নিজেই তাঁকে গুগল ড্রাইভ দেখিয়েছে এবং অন্য পড়ুয়াদেরও সে গর্বের সঙ্গে সেই গুগল ড্রাইভ দেখাচ্ছে।’
একটা বিষয় এখানে স্পষ্ট যে এই ড্রাইভের অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকী বহু মহিলার সঙ্গে যাদবপুরের প্রাক্তন ওই পড়ুয়াও তা স্বীকার করেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এই ড্রাইভ সম্পর্কে জানেন। মোটামুটিভাবে সকলেই একে-অপরের কাছ থেকে এই ড্রাইভ সম্পর্কে শুনেছেন কিন্তু কেউই এটা নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে রাজি নন। কেউ কেউ নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে ভীত, তাই কেউই এতদিন এই ড্রাইভ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি। কিন্তু দিল্লিতে ‘বয়েস লকার রুম’-এর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মুখ খোলার সাহস পান কলকাতার এই তরুণী।
ঘটনাচক্রে, তারা প্রত্যেকেই ঘটনাচক্রে মান বা মডেল অফ ইউনাইটেড নেশনের সদস্য। এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো অভিযুক্ত যুবকদের মধ্যে একজন রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ স্তরের নেতার ছেলেও আছেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। জড়িয়ে যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং বর্তমান ছাত্র মিলিয়ে প্রায় সাত থেকে আটজনের নাম। সূত্রের খবর, ভাইরাল হওয়া একাধিক ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম থাকা যশ প্রকাশ মজুমদার নামে এক ছাত্র, রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ছেলে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সাইকেলে UP থেকে ছত্তিশগঢ়ের পথে দম্পতি, ট্রাকের নীচে থেঁতলে গেল বাড়ি ফেরার স্বপ্ন!