মুকুলের তৃণমূল-যোগের মধ্যেই বঙ্গ বিজেপির অস্বস্তি বাড়ালেন অনুপম হাজরা। ট্যুইট করে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বের প্রতি।
এক সময় তৃণমূলেই ছিলেন অনুপম হাজরা। ২০১৯ সালে দল নিয়ে ঢেলে নিন্দামন্দ করতে শোনা যায় তাঁকে। এরপরই দল থেকে বের করে দেওয়া হয় অনুপমকে। জানুয়ারিতে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তৃণমূল থেকে, মার্চেই যোগ দেন বিজেপিতে। মুকুল রায়ের হাত ধরেই বিজেপিতে যান তিনি। এবার সেই মুকুল রায় যখন আবারও ‘ঘরওয়াপসি’র পথে, তখন বিজেপির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন অনুপম। একইসঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন, দলে মোটেই ‘আদর যত্ন’ নেই তাঁর।
এদিন রীতিমতো চাঁচাছোলা ভাষায় অনুপমের আক্রমণ, ‘ভোটের সময় দু-একজন নেতাকে নিয়ে মাতামাতি হয়েছিল। যোগ্যতা সত্ত্বেও লবিবাজি করে বাকিদের বসিয়ে রেখে অবজ্ঞা-অপমান করা হয়েছে। আর এসব তারই করুণ পরিণতি। চার্টার্ড ফ্লাইটের রয়্যাল যাত্রীরাও মিসিং। এখনও সময় আছে, বঙ্গ বিজেপির উচিত লবিবাজি বন্ধ করা। যোগ্যতা অনুযায়ী বসে থাকা নেতাদের কাজে লাগানো হোক। আশা রাখছি, বঙ্গ বিজেপির আগামী বৈঠকে প্রোটেকল মেনে আমন্ত্রণ পাব।’
আশা রাখছি এবার বঙ্গ বিজেপির আগামী দিনের মিটিং গুলোতে proper protocol মেনে invitation পাবো !!! pic.twitter.com/UXjXs2AqIl
— Anupam Hazra (Dr. Anupam Hazra) (@tweetanupam) June 11, 2021
আরও পড়ুন: নতুন অ্যাপ আনছে রাজ্য সরকার, এবার দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছাবে বাজার!
যে প্রসঙ্গে পরে যোগাযোর করা হলে একইরকম আক্রমণের সুর বজায় রেখে অনুপম হাজরার সংযোজন, ‘বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ৩ থেকে আমরা ৭৭ হয়েছি, কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে থামতে হয়েছে আমাদের। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বারবার রাজ্যে এসে প্রচারের মাঝে ২০০-র বেশি আসন পাওয়ার দাবি করেছিলেন। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। বিরোধী দলনেতার আসন সন্তুষ্ট থাকার প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটাই হয়েছে। আসলে ভোটের আগে থেকেই একশ্রেণির লোকজনের লবিবাজিতে কাজ করতে চেয়েও অনেককেই কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ক্যাম্পেনে পর্যন্ত ডাকা হয়নি। একসঙ্গে লড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা করা হয়নি। যদি এখনই গোটা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বিপদ অপেক্ষা করেছে বঙ্গ বিজেপির জন্য।’
এদিকে মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলেও কার্যত এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘ জল্পনা-কল্পনায় কান দেওয়ার সময় নেই। রাজ্যজুড়ে কর্মীরা মার খাচ্ছেন, তাদেল নিয়ে ভাবতে হবে।’ তবে এই লবিবাজির কথা বলার জন্য তাঁকে যাতে শাস্তির মুখে না পড়তে হয় সে পথও খুলে রেখেছেন অনুপম। লিখেছেন, ‘দয়া করে বেসুরো তকমা লাগাবেন না। বঙ্গ বিজেপির অসময়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। বিজেপিতে আছি এবং বিজেপিতে থাকব। জাস্ট বঙ্গ বিজেপিতে নোংরা লবিবাজি বন্ধ করার উদ্দেশে এই বার্তা।’ উল্লেখ্য, দলের ত্রুটি নিয়ে মুখ খুলে ইতিমধ্যেই শৃঙ্খলাভঙ্গের দায় কাঁধে নিতে হয়েছে বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্তকে।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর লোকসভা ভোটে যাদবপুরের প্রার্থী করা হয়েছিল অনুপমকে। কিন্তু তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তী তাঁকে গোল দিয়ে দেন। ভোটে হারার পর সাংগঠনিক কাজে সে ভাবে তাঁকে আর ময়দানে দেখা যায়নি। বিরোধীরা বলছিল, অনুপম হার হজম করতে না পেরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এদিন অনুপমের পোস্টে অন্য ইঙ্গিত পাওয়া গেল। দলেই যে অনেকে কোণঠাসা, তা বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে, মুকুলকে পাশে বসিয়ে সদর্প ঘোষণা মমতার