দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হবে বীর এই দেশ নেতার জন্মজয়ন্তি। চলুন এই উপলক্ষে আজ জেনে নেওয়া যাক নেতাজির সম্পর্কে একমুঠো অজানা কাহিনী!
- পুর পরিষেবার টাকার যোগান দিতে নিজের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার এক কর্তা। নাম সুভাষচন্দ্র বসু। পরে সারা বিশ্ব যাঁকে জানবে ‘নেতাজি’ বলে। ভোটে জিতে কাউন্সিলর হওয়ার পর পুরসভার সিইও করা হয়েছিল সুভাষকে। পুরসভার আর্থিক অবস্থা তখন স্বাস্থ্যকর নয়। অথচ অত্যাবশ্যক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিষেবা দিতে হবে মানুষকে। খরচে রাশ টানার জন্য নিজের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছিলেন সংস্থার সিইও সুভাষ!
- শুধুমাত্র অস্ত্র দিয়েই তো আর যুদ্ধ জেতা যায় না। তার জন্য দরকার পর্যাপ্ত রণকৌশল। ব্রিটিশরাই প্রথমে ইথার তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে ভারতবাসীকে নিজেদের দলে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তাঁদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এর পালটা দিয়েছিলেন বাঙালি এই যুবকটি। তিনি গড়ে তুললেন আজ়াদ হিন্দ রেডিও। এই রেডিওর মাধ্যমেই দেশবাসীকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অনুপ্রাণিত করতে শুরু করলেন। পালটা চাপে ব্রিটিশরাও গেল খানিকটা ঘাবড়ে।
- ১৯৪২ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল আজ়াদ হিন্দ রেডিও। তখন এটাকে লোকে বলত, ফ্রি ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার। সুভাষের মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানির পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর কাছে রণকৌশল পৌঁছে দেওয়া। সেকারণেই বার্লিন থেকে তিনি এই রেডিও সম্প্রচার শুরু করেন। ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রেডিও কাঁপিয়ে ভেসে এল একটা গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। “দিস ইজ় সুভাষ চন্দ্র বোস স্পিকিং টু ইউ ওভার আজ়াদ হিন্দ রেডিও”। সেই কণ্ঠস্বরে যে গোটা দেশের মাটি কেঁপে উঠেছিল, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: ‘পরাক্রম দিবস’ বনাম ‘দেশনায়ক দিবস’, ‘দ্বন্দ্ব’জিইয়ে রেখেই নেতাজিকে শ্রদ্ধা মোদী-মমতার
Speaking from Azad Hind radio, Germany on 31-8-42, Netaji hailed Quit India movement& said ‘I wud request Mr.Jinnah, Mr. Savarkar &all those leaders who still think of a compromise with British..Supporters of British imperialism will naturally become non-entities in a free India’ pic.twitter.com/fnVttTslla
— Sharmistha Mukherjee (@Sharmistha_GK) October 21, 2018
- আজাদ হিন্দ সরকারের জাতীয় সঙ্গীতের কথায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচনা করা হল ‘শুভ সুখ চৈন কী বরখা বরষে ভারত ভাগ হৈ জাগা’। গানটির স্বরলিপি তৈরি করেছিলেন অম্বিক মজুমদার এবং স্বরগ্রাম রচনা করেছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুর। গানটা পিয়ানোতে বাজিয়ে নেতাজিতকে শোনানো হয়েছিল। আজাদ হিন্দ রেডিও-র অন্যতম লেখক মমতাজ হুসেন এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর কর্নেল আবিদ হুসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন-গণ-মন’ থেকে হিন্দুস্থানী সুরে এই ‘শুভ সুখ চৈন’ গানটি লিখেছিলেন। তবে শুধুমাত্র গান রচনাই নয়, এই আজাদ হিন্দ সরকার ডাকটিকিট এবং নোটও ছাপিয়ে ছিল। স্থাপিত হয়েছিল আজ়াদ হিন্দ ব্যাঙ্ক এবং বিদেশে দূতাবাস। কিন্তু, দূর্ভাগ্যের ব্যাপার এই সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
- সুভাষ চন্দ্র বসুর আদি বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে। এই গ্রাম এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পুরন্দর খানের প্রচুর জমিজমা রয়েছে। এবার প্রশ্ন হল কে এই পুরন্দর খান? আসুন পরিচয়টা আরও খানিকটা সবিস্তারে দেওয়া যাক। গোপীনাথ বসু ছিলেন গৌড়েশ্বরের নবাব হুসেন শাহের প্রধান অমাত্য। গোপীনাথ বসুর কাজে খুশি হয়ে হুসেন শাহ তাঁকে পুরন্দর খান উপাধি দেন। সেইসঙ্গে দিয়েছিলেন অনেক জমি-জায়গাও। আজ সেই জায়গাকেই আমরা সুভাষগ্রাম নামে চিনি। তো, প্রথমে এই জায়গা পুরোটাই জঙ্গলে ভর্তি ছিল। কেউ কেউ বলেন আবার, গোপীনাথ নাকি নবাবের থেকে ওই জমি কিনে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে জঙ্গল সাফ করে ওই অঞ্চলে জনবসতি গড়ে তুলেছিলেন।সুভাষচন্দ্র বসু হলেন পুরন্দর খানের চতুর্দশ প্রজন্ম।
আরও পড়ুন: নেতাজির এই 10 টি বাণী, যা প্রতিটি দেশবাসীর রক্তে আজও ঢেউ তোলে