Site icon The News Nest

ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতর্ক বাবরি ধ্বংসের রায় আজ ! ফিরে দেখা দীর্ঘ ২৮ বছর

babri 1

বত্রিশ জন অভিযুক্ত। সঙ্গে আরও লাখো অজ্ঞাত-পরিচয় করসেবক। ২৮ বছর মামলা চলায় অভিযুক্তদের মধ্যে, ১৬ জন আগেই প্রয়াত। দেশের ইতিহাসে, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় বুধবার অর্থাৎ আজ, একটু পরেই।

১৯৯২ সালের ৬ অগাস্ট ৷ একদল করসেবক আচমকা হামলা চালাল বাবরি মসজিদে৷ তাদের দাবি ছিল, ওই স্থানে ছিল রামমন্দির৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক হিংসা ৷ হাজার হাজার মানুষ সেই হিংসার বলি হন৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসীমা রাও ফের তৈরির ঘোষণা করেন ও এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্রের তদন্তের জন্য বিচারপতি এমএস লিবরহনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন৷

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ১০ মাস পর চার্জশিট দেয় সিবিআই। সঙ্ঘ পরিবারের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে নাম ছিল লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতীর। উত্তরপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার, সাক্ষী মহারাজ, ভিএইচপি নেত্রী সাধ্বী ঋতম্ভরা এবং রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের সভাপতি নৃত্য গোপাল দাস ও সম্পাদক চম্পত রাইয়ের নাম চার্জশিটে দেয় সিবিআই। সবমিলিয়ে ৪৮ জন ছিলেন অভিযুক্তের তালিকায়। মামলা চলাকালীন ১৬ জন মারা যান। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন, বিশ্বহিন্দুপরিষদ নেতা অশোক সিঙ্ঘল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া ও শিবসেনা সুপ্রিমো বাল ঠাকরে।

আরও পড়ুন: লাদাখকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে মানি না ! প্ররোচনা মন্তব্য বেজিংয়ের

ঘটনার পর সাবেক ফৈজাবাদ জেলায় পুলিস ২টি এফআইআর দায়ের করে। ১৯৭ নম্বর এফআইআরে অজ্ঞাতপরিচয় লাখো করসেবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। লখনউয়ের আদালতে শুরু হয় মামলা। ১৯৮ নম্বর এফআইআরে আডবাণী, জোশী, উমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হয়। রায়বরেলির আদালতে শুরু হয় মামলা। তদন্ত শুরুর পর তিরানব্বইয়ের অক্টোবরে ২ মামলায় যৌথ চার্জশিট দেয় সিবিআই। ৪৮জন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও মসজিদ ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। ২০০১-এ আডবাণী-সহ ১৪ জন নেতাকে, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় নিম্ন আদালত।

২০০৩-এ সিবিআই আর একটি চার্জশিট দিলেও, রায়বরেলির আদালতের নির্দেশে প্রমাণ না থাকায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছাড়াই আডবাণীদের বিরুদ্ধে এগোতে থাকে মামলা। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রেখে, আডবাণীদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।  ২০১১ সালে করা সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়। আডবাণী সহ ১৪ জন নেতার বিরুদ্ধে ফিরে আসে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই, লখনউয়ের সিবিআই আদালতে, করসেবকদের বিরুদ্ধে এবং আডবাণীদের বিরুদ্ধে ২টি মামলার একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন দশক পর গত পয়লা সেপ্টেম্বর শেষ হয় সেই শুনানি।

২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, নিয়মিত শুনানি করে ২ বছরের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। একাধিকবার সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়। মামলা শেষ করতে লখনউয়ের আদালতের বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদবের অবসরের দিন পিছিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন আডবাণী, জোশীরা। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, সংঘর্ষে উস্কানি, ফৌজদারি ষড়যন্ত্র-সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হন তাঁরা। লখনউয়ের আদালতে নিজেদের বয়ানে আডবাণী-জোশী দাবি করেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই ষড়যন্ত্রে অভিযোগ আনা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সে সাক্ষ্য দেন তাঁরা।উমা-কল্যাণরা সশরীরে হাজিরা দেন। তবে, কল্যাণ সিং ছাড়া কেউই, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে কোনও নথি দেননি। মসজিদ ধ্বংসে জন্য ফাঁসি দেওয়া হলেও তিনি নিজেকে ধন্য মনে করবেন বলে আদালতের বাইরে মন্তব্য করেন উমা ভারতী।

আডবাণী, জোশীরা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও লিবেরহান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় বাবরি ধ্বংস না ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, না ছিল অপরিকল্পিত। গত বছর নভেম্বরে অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষেই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, সেখানেও শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে, বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে ভাঙা হয় আইন। হিসাব কষেই নষ্ট করে দেওয়া হয় মানুষের উপাসনাস্থল। বাবরি ধ্বংস মামলায় সাড়ে তিনশো জনের সাক্ষ্য শুনেছে নিম্ন আদালত। খতিয়ে দেখা হয় প্রায় ৬০০ নথি। ইতিমধ্যেই কেটে গেছে তিন দশক। মূল-মামলা উচ্চ আদালতে গড়ালে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে কতদিন লাগবে, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে সব মহলে।

আরও পড়ুন: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে করোনা আক্রান্ত ৪০০ সেবায়েত ও আধিকারিক!

Exit mobile version