Site icon The News Nest

Boi Shoi: সমরেশ মজুমদারের সেরা ৫ টি বই

samaresh majumdar

সমরেশ মজুমদার একটা শক্তিশালী নাম। তিনি শুধুমাত্র একজন পাঠকপ্রিয় লেখকই নন, তার লেখার সৃজন ও বাস্তবতা চারপাশকে উপলব্ধি করায়। অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাসের লেখক সমরেশ মজুমদারের গুণমুগ্ধ ভক্ত দুই বাংলায় ছড়িয়ে আছে। এই পর্বে লেখক সমরেশ মজুমদারের সেরা ৫ টি বই নিয়ে আলোচনা করা হল।

সাতকাহন

উপন্যাসটি সমরেশ মজুমদারের লেখা একটি নারী কেন্দ্রিক উপন্যাস। সমাজের নিচু স্থান থেকে একা একজন মেয়ের উপরে উঠে আসার গল্প এই সাতকাহন। উপন্যাসটি দ্বারা লেখক বুঝাতে চেয়েছেন যদি ইচ্ছে শক্তি দৃঢ় হয়, তার লক্ষ্য ঠিক থাকে ও কঠোর পরিশ্রমী হয় তাহলে তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।আমাদের সমাজে একটি মেয়ের অবস্থান কোথায় তারই কিছু বাস্তব চিত্র এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসের মূল চরিত্র দীপাবলী নামের একটি সাহসী মেয়ে। উপন্যাসে দীপাবলী ছাড়াও আরো অনেকগুলো নারী চরিত্র এসেছে। চা-বাগানকে ঘিরে যাদের জীবিকা, তাদের জীবন কেমন হয় তার চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায় বইটিতে।

দীপাবলীর উপরে উঠার প্রথম ধাপটি শুরু হয় এই চা-বাগান থেকেই। সাহস আর একাগ্রতার জোরেই অতীতের সবকিছু ভুলে শুরু করতে পেরেছিল নতুন জীবন।নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করেছিল পড়াশুনার মাধ্যমে। কাছের মানুষরা লোভে ভয়ঙ্কর দানব হয়ে উঠেও দীপাকে কেউই থামাতে পারেনি। তখন সে বুঝতে পারে সে আসলে অনেকের মাঝে থেকেও ভীষন একা। তবুও সে ভেঙ্গে পড়েনি। সাধারণের মাঝেই দীপা অসাধারণের প্রতীক। তার জীবনে এসে মিশেছে নানা নাটকীয়তা, আর এসব নাটকীয়তাকে ছাপিয়েই তার জীবনের সব কিছু মিলিয়ে সমরেশ মজুমদারের এই সাতকাহন!

উত্তরাধিকার

এটি সমরেশ মজুমদারের লেখা সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি। উপন্যাসটি কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো যা পরে বই আকারে বের হলে তা পাঠকের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়। উত্তরাধিকারের মূল চরিত্রের নাম অনিমেষ। নিজের পরিবারের সাথে বসবাস করছিলো স্বর্গছেঁড়ার চা বাগানের কোয়ার্টারে। বংশানুক্রমে দাদু, বাবা দুজনেই চা বাগানের বড় বাবু। যে সময়ের ঘটনা লেখক তাঁর এই উত্তরাধিকার নামক ফ্রেমে আটকাতে চেয়েছেন সে সময়টায় ভারত সবে ইংরেজদের শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে।

শিশু অনির হাত দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট পতাকা স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তলনের মধ্যে দিয়ে তার মনে দেশপ্রেমের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে উপন্যাসে। ছোট বেলা বুনা বীজ চারাগাছের ন্যায় বাড়ছিল সে যখন তার পিসি ও দাদুর সাথে জলপাইগুঁড়ি চলে যায়। বরাবর চুপচাপ ও নির্বিবাদী অনিমেষের চোখ দিয়েই ঔপন্যাসিক আমাদেরকে দেখিয়েছেন একটা অস্থির সময়ের ছবি। কংগ্রেস-বামদের বিরোধ, চিরাচরিত বাঙালী পরিবারের টানাপোড়েন ও ভালোবাসা, দেশপ্রেম আর সামনের অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়ানো সবটাই যেন উঠে এসেছে অবধারিতভাবে। উত্তরাধিকার শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি দলিল। এমন এক দলিল যা সাক্ষী হয়ে আছে অনিমেষ নামের একটা সাধারণ ছেলের চোখে দেখা একটা অসাধারণ সময়ের।

আরও পড়ুন: নিসর্গ ও নিঃসঙ্গতার লেখক রাসকিন বন্ড…৮৭ তম জন্মদিনে পড়ুন লেখকের অবিস্মরণীয় ১১ উক্তি

কালবেলা

এটি সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস উত্তরাধিকারের পরবর্তী পর্ব। উত্তরাধিকারে যেখানে গিয়ে উপন্যাসটা শেষ হয় তারপর থেকে কালবেলা শুরু। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় কলেজ জীবন শেষ করে অনিমেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কলকাতা পড়াশোনা করতে আসে অনিমেষ। বিএ পড়াশোনার করার পর এমএ পড়ার সময় জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। উপন্যাসের এক পর্যায়ে মাধবীলতা নামের একটি মেয়ে প্রেমের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে সে। মেয়েটি অনিমেষের যাবতীয় কাজে অকুন্ঠ সমর্থন করে যায়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় অনিমেষ যখন খেয়াল করে তার দল আদর্শ লাইনচ্যুত তখন সে বাম রাজনীতি ছেড়ে বিপ্লবের পথে অস্ত্র হাতে অগ্রসর হয়। এখানেও মাধবীলতা তাকে সমর্থন করে যায়। বিদ্রোহের কাজের শুরুতে তাকে কলকাতা ছাড়তে হয়। বিদ্রোহের কাজের এক পর্যারে বারভূমে আসে একটি গোপন বৈঠক করতে। গোপন বৈঠকের রাতটা অনিমেষ মাধবীলতার সাথে কাটায়। সেখান থেকে ফিরে বিদ্রোহের এক পর্যায়ে পুলিশ কতৃক গ্রেফতার হয় এবং জেলে পঙ্গুত্ব বরণ করে।

জেলে থাকার সময়টাতে সে সংবাদ পায় বীরভূমের রাতটার ফসল মাধবীলতা এই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। পঙ্গুত্বটা অনিমেষকে হাঁপিয়ে তোলে। সে পালিয়ে যেতে চায়। সে কি চাইলেই যেতে পারে! মাধবীলতার কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেয় সে! নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বলে মাধবীলতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মাথা উঁচু রাখে, নিজের ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখে। ভালোবাসার মাঝে যেন বিপ্লবের আরেক নাম হয়ে উঠে এই মাধবীলতা।

কালপুরুষ

এটি উত্তরাধিকার ও কালবেলা উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ ধরে লেখা আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। কালবেলা উপন্যাসে অনিমেষ যে ফসল বুনেছিল এই উপন্যাসে তা চারা গাছ হয়ে একটু একটু করে বড় হতে থাকে! অনিমেষ আর মাধবীলতার ভালোবাসার ফসল অর্ক। নামটা মাধবীলতার দেয়া। তাদের নিস্তব্ধ জীবনের সূর্য যেন অর্ক। পঙ্গু স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে বস্তির এক বাড়িতে মাধবীলতার বাস! পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে সব সময় কি একটা ভয়ে থাকে মাধবীলতা! বস্তিতে থাকার মাশুল অবশ্য দিতে হয় তাদের। স্কুল আর ঋণের চাপে জর্জরিত মাধবীলতা আর পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু অসহায় অনিমেষের শত সতর্কতার পরও অর্ক আস্তে আস্তে বস্তির পরিবেশে আসক্ত হয়ে পরে। কিলা, খুরকি, বিলা এরাই হয়ে ওঠে অর্কর নিত্যদিনের সঙ্গী।

তবে অন্য একটা ঘটনায় সমাজের উচু তলার কিছু মানুষগুলোর আসল চেহারাটা সামনে আসে অর্কর। নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে সমাজের এসব অসঙ্গতির সাথে কখনোই তাল মেলাবে না। তারপর তাকে বস্তির লোকজনকে সাথে নিয়ে নতুন এক আন্দোলনে সামিল হতে দেখা যায়। এক পরিবার এক হাড়ি হিসেব করে পুরো বস্তিকে সাথে নিয়ে শুরু করে এক অবাক করার মতো কাজ। নির্দিষ্ট একটা অর্থের বিনিময়ে সারা মাস তিনবেলা সবাইকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেয় সে। এসব দেখেশুনে আশার সঞ্চার হয় অনিমেষ মাধবীলতার মনে। অর্কর এই প্রচেষ্টা কি সফল হবে? নাকি ঘুণে ধরা সমাজের ততোধিক নষ্ট মানুষগুলোর আতে ঘা লাগবে এভাবে?

গর্ভধারিণী

এটি সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত একটি উপন্যাস। এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালোমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজছে।

এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগোপন করতে হলো হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনো আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলো তাদের একজনের- যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্ৰ আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী।

এছাড়াও লেখকের জনপ্রিয় লেখা হচ্ছে – মৌষলকাল, আট কুঠুরি নয় দরজা, অর্জুন সিরিজ। আপনার কোনটা পছন্দ জানান আমাদের কমেন্ট করে।

আরও পড়ুন: সমাজের বুকে শব্দবন্ধের কঠিন চাবুক…পড়ুন, আলোচিত ও সমালোচিত চিন্তাবিদ আহমদ ছফার উক্তি

 

Exit mobile version