Site icon The News Nest

WB election 2021: ৬৪ বিধায়ক বাদ দিয়ে মমতা দেখিয়ে দিলেন দলের রাশ এখনও পুরোপুরি তাঁর হাতেই

mamata 2

এক কোপে ৬৪ জন বিধায়কের নাম কাটা পড়ল শাসক তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা থেকে। যা থেকে স্পষ্ট, ‘কঠিন’ বিধানসভা ভোটে ‘কঠোর’ প্রার্থিতালিকা তৈরি করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই প্রার্থিতালিকা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন মমতা। পাশাপাশি, তিনি তথ্য নিয়েছেন ভৌট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার কাছ থেকেও। প্রশান্তের সংস্থার কর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’-র বিষয়ে যেমন খোঁজ নেওয়া হয়েছে, তেমনই খোঁজ নেওয়া হয়েছে এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জনপ্রিয়তা এবং কর্মদক্ষতার বিষয়েও। পাশাপাশিই, বিজেপি-র সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ নিয়েও আবশ্যিক খোঁজখবর করা হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই দলনেত্রী মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হরিশ মুখার্জি রোডের ‘শান্তিনিকেতন’ নয়। ৯ নম্বর ক্যামাক স্ট্রিটও নয়। তৃণমূলের রাশ এখনও ধরা রয়েছে ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দার হাতেই। শুক্রবার দুপুরে সেই ঠিকানা থেকে ঘোষিত রাজ্যের শাসকদলের প্রার্থিতালিকা তেমনই দেখিয়ে দিল। দেখিয়ে দিল, দলের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নিরঙ্কুশ’ প্রাধান্য এবং কর্তৃত্ব এখনও অটুট। দেখিয়ে দিল, মমতার হাতে দলের রাশ যতটা রয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের হাতে ততটা নেই। ভোটের প্রার্থী ঘোষণার আগে তৃণমূলের অন্দরে এমন জল্পনা ঘুরছিল যে, প্রার্থী বাছাইয়ে শেষকথা বলবেন অভিষেক-প্রশান্ত জুটিই। কিন্তু যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে মমতার ‘হাতযশ’ই প্রধান। এটা ঠিক যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিষেক-প্রশান্ত জুটির সুপারিশ মানা হয়েছে। কয়েকজন বিধায়ককে আবার মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের মতামত প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু প্রাধান্য থেকে গিয়েছে দলের সর্বময় নেত্রীরই।

তৃণমূলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুক্রবার ঘোষিত প্রাথিতালিকার ছত্রে ছত্রে রয়েছে মমতার অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দৃষ্টি এবং বিভিন্ন সমীকরণ। কঠিন হাতে মমতা প্রার্থিতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ সোনালী গুহ, মালা সাহা, স্মিতা বক্সীদের। তেমনই ভাইপো অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিজ্ঞ নেতাদেরই টিকিট দিয়েছেন।

বস্তুত, দলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক প্রশান্তর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁদের আসন বদলে দেওয়ার জন্য। চেয়েছিলেন কলকাতার কাছাকাছি আসনে প্রার্থী হতে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তাতে কান দেননি দলনেত্রী। সটান বলেছেন, দাঁড়াতে হলে পুরোন আসনেই দাঁড়াতে হবে। সে গ্রামীণ আসন হলেও। যে উদাহরণ দেখিয়ে তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বলছেন, ‘‘অনেকেই ভেবেছিল অভিষেকের কাছে দরবার করে নিজের পছন্দসই আসনটা বাগিয়ে নেবে। অনেকে প্রার্থী হওয়ার জন্যও সেখানে রাতদিন দরবার করেছে। কিন্তু মমতা’দি সে সব আবেদন ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি। তিনি সকলের সমস্ত মতামতই শুনেছেন। পরামর্শও শুনেছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিজের অভিজ্ঞতা এবং বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে প্রার্থী বাছাই করেছেন। রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং দুই আমলা শেষ দিন পর্যন্ত উমেদারি করে গিয়েছেন টিকিটের জন্য। কিন্তু মমতা কর্ণপাতও করেননি।

আরও পড়ুন: ১০ থেকে ৩০ টাকা, একধাক্কায় দেশের সর্বত্র প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিল রেল, বাড়ল প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ভাড়াও

কিছু বিধায়ককে বাদ দেওয়া হয়েছে অসুস্থতা এবং বয়সের কারণে। অনেকে আবার লোকসভা ভোটের নিরিখে বিপুল ভোটে বিজেপি-র চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। অনেকের জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। স্থানীয় স্তরে অভিযোগও ছিল। অনেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছিলেন বলেও খবর পৌঁছেছিল কালীঘাটে। যেমন নদিয়ার এক বিধায়ককে বাদ দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে। আবার রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকেও বাদ দেওয়া হয়েছে একই কারণে। অপর এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর জীবনযাপন নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ থাকায়।

রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। কারণ, কিছুদিন আগেই দেবশ্রী জানিয়েছিলেন, তিনি আর রায়দিঘিতে দাঁড়াতে চান না। দলকে বলেছেন অন্য কেন্দ্র দিতে। প্রার্থিতালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেবশ্রীর আবেদন মানেনি দল। অন্য কেন্দ্র দেওয়া তো দূরের কথা! তাঁকে তালিকা থেকেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে। বাদ পড়ে অনেকে ভেঙে পড়েছেন। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আরাবুল ইসলামের মতো দুঁদে এবং দাপুটে নেতাও রয়েছেন।

তৃণমূল যে এ বার তরুণ প্রজন্মের উপরই জোর দিতে চাইছে, সে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। সেই ঝোঁকই বজায় রয়েছে ঘোষিত প্রার্থিতালিকায়। দল যে নতুন প্রজন্ম নিয়েই বিধানসভা ভোটের কঠিন লড়াইয়ে সামিল হতে চায়, তা-ও তালিকায় স্পষ্ট।বস্তুত, বিজেপি যাতে তাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ‘সংখ্যালঘু নির্ভরতা’-র অভিযোগ না তুলতে পারে, সেই বিষয়েও খেয়াল রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী। ২০১৬ সালে তৃণমূলের তালিকায় ৫৬ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী ছিলেন। এবার ৪৩।

আরও পড়ুন: ভারতে কমছে মুক্ত চিন্তার পরিসর, খর্ব হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা! দাবি মার্কিন রিপোর্টে

Exit mobile version