নয়াদিল্লি: লোকসভা ভোট শুরু হতে বাকি তিনদিন। কয়েকদিন আগেই ইস্তাহার প্রকাশ করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। সোমবার ইস্তাহার প্রকাশ করল কেন্দ্রে শাসক দল বিজেপি। ইস্তাহারের নাম সংকল্প পত্র। তাতে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তোলা, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের কথাও বলা হয়েছে।পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় আসার জন্য যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গেরুয়া শিবির, এদিন সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি হল। নতুন কিছু ঘোষণা অবশ্যই ছিল, তবে সেগুলি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব অনেক আগে থেকেই সুর চড়াচ্ছে।
দেখে নিন বিজেপির ইস্তেহারে মূল কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
- নিরাপত্তাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার গতি আরও বাড়ানো হবে।
- সন্ত্রাসবাদ কোনো ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার জন্য নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে পূর্ণ স্বাধীনতা।
- দেশের অন্য প্রান্তেও ধাপে ধাপে নাগরিকপঞ্জি চালু করা।
- উত্তরপূর্বে অনুপ্রবেশ আটকানোর জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার। সীমান্তে কাঁটাতারের জন্য ‘স্মার্ট ফেন্সিং’ পদ্ধতি ব্যবহার।
- জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ধারা (৩৭০) বাতিল করার জন্য জন সংঘের যে অবস্থান ছিল, সেই অবস্থান ধরে রাখা। ৩৫এ ধারাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
- কোনো সুদ ছাড়াই কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ।
- ক্ষমতায় এলেই রাম মন্দির তৈরি করা।
- ২০২২-এর মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের জন্য পাকা বাড়ি।
- পরিকাঠামো খাতে ২০২৪ সালের মধ্যে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ।
ইস্তাহার প্রকাশের সময় বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ভারত এখন বিশ্বে এক মহাশক্তি। ২০০৪ থেকে ’১৪ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের সম্মান কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের দেশ বিশ্বের প্রধান ছ’টি অর্থনীতির অন্যতম। অমিতের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজের প্রতিটি অংশের প্রতি ন্যায়বিচার করেছেন। তিনি গ্রামে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দিয়েছেন, সবার জন্য সস্তায় স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করেছেন, কৃষকদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প এনেছেন।একাধিক ইস্যুতে ২০২২ সালকে লক্ষ্যমাত্র ধরে কথা বলে এসেছে বিজেপি। ইস্তেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সেকথাই বললেন মোদী। তিনি বলেন, ২০২২ সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালিত হবে। এই বছরকে টার্গেট করে সরকার ৭৫টি পদক্ষেপ পূরণ করবে। এতদিন বাধ্যবাধকতার জন্য বহু কাজ হয়ে ওঠেনি। আগামী পাঁচ বছর মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্যে আরও কাজ করবে সরকার।
২০১৪-র লোকসভো ভোটে বিজেপির ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল কালো টাকা দেশে ফেরানো। আর সেই সূত্রেই মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল ওই কালো টাকা উদ্ধার করে গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ১৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু কালো টাকা উদ্ধার হওয়া দূরে থাক, মোদীর জমানাতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বিজয় মাল্য, নীরব মোদীরা। ২০১৯-এ ফের লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে না বিজেপির ইস্তাহারে, না মোদীর ভাষণে উল্লেখ করা হল কালো টাকার সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন। নোটবন্দির ফলে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার উল্লেখ নেই ইস্তাহারে। জিএসটি-তে খুচরো ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাও আসেনি। অর্থনীতির এই দুই ক্ষত কী ভাবে আগামী পাঁচ বছরে মেরামত করা যেতে পারে, তার দিশা যেমন ইস্তাহারে নেই, অর্থমন্ত্রীও নিজের ভাষণে তার ধারে-কাছে গেলেন না। বললেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে গত পাঁচ বছরে।