#কলম্বিয়া: একনজরে দেখে মনে হতেই পারে গলে পড়ছে রং। ৬২.১ মাইল নদীর কোথাও লাল, কোথাও হলুদ, কোথাওবা আবার কালো। পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসছে অজস্র জলধারা। মিশছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই এক নদীর জলে। নির্জন, গাছপালা ঘেরা সেই নদীর জল স্বচ্ছ। গভীরতা মাপা যায়। নদীর এই অসাধারণ রূপ চোখে পড়বে, কলম্বিয়ায়।
কলম্বিয়ার সেরেনিয়া দে লা ম্যাকারেনা প্রদেশের একটি পাহাড়ি নদী কানো ক্রিস্টালস। নির্জন পরিবেশের টানে শুধু নয়, ম্যাকারেনার এই নদীর আকর্ষণে হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় হয় প্রতি বছর। কেউ বলেন ‘দ্য রিভার অব ফাইভ কালার’ (The River Of Five Colour) বা পাঁচ-রঙা নদী, আবার কেউ বলেন ‘লিকুইড রেনবো।’ (Liquid Rainbow) প্রকৃতি আপন খেয়ালে যেন রঙ-তুলি দিয়ে এঁকে রেখেছে এর প্রতিটি স্রোত। কখনও তাতে লাল রঙের ছটা, আবার কখনও সব রঙ মিলেমিশে একাকার। স্থানীয়রা বলেন, এই নদী নাকি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।
নদীর চারপাশে ঘিরে রয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। বোগোটা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে মধ্য কলম্বিয়ার ঘন জঙ্গলের ভিতরে এই নদীর অবস্থান। ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার বিস্তৃত নদীটি পাহাড়ি ঝর্ণার জল বুকে নিয়ে বয়ে চলেছে। নদী জুড়েই নানা রকম পাথর। তার উপর দিয়েই লাফিয়ে লাফিয়ে বয়ে চলেছে কানো ত্রিস্টালস। মাঝে মাঝে নদীর চরায় গোলাকার গর্ত বা ‘জায়ান্ট কেটেলস’ দেখা যায়। বসন্ত কালে এর শোভাই আলাদা। মূলত জুন থেকে নভেম্বর মাস নদীতে এই রঙের খেলা দেখা যায়। বসন্তের শুরু থেকে নদীর জলে লাল রঙ ধরে। ধীরে ধীরে গোলাপি আভায় ভরে ওঠে এর ঢেউ। বৃষ্টি নামলে হালকা সবুজ বা কখনও হলুদ। এর পর থেকে গোলাপি, বেগুনি, হাল্কা নীল মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পাঁচ-রঙা নদীতে সাত রঙের খেলা দেখা যায়।
সেরেনিয়া দে লা ম্যাকারেনার অবস্থানও বড় বিচিত্র। মূলত তিন রকম ইকোসিস্টেম এখানে প্রভাব ফেলেছে। প্রথমত নদীর জলে ফ্লোরা ও ফনার উপস্থিতি, দ্বিতীয় আন্দিজ পার্বত্য এলাকার কঠিন পাললিক শিলা এবং আমাজন বৃষ্টিঅরণ্যের জলবায়ু বৈচিত্র্য। ম্যাকারেনার এই এলাকাকে মূলত হাইড্রোফাইটিক রেনফরেস্ট বলা হয়। নদীর জলের এই রঙ বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা চলছে। বিশেষত জলজ উদ্ভিদের আধিক্যের জন্যই এই রঙের বদল বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাঁদের ব্যাখ্যায় ম্যাকেরেনিয়া ক্ল্যাভিগেরা (Macarenia Clavigera) নামে এক গুল্মের আধিক্য এই নদীর জলের রঙের বদলের অন্যতম কারণ।
নদী ঘিরে প্রায় ১৬ মিলিয়ন হেক্টর পাহাড়ি এলাকায় নানা বিপন্ন প্রাণীর বাস। ৪২০ রকম প্রজাতির পাখি, ১০ রকমের উভচর, ৪৩ রকমের সরীসৃপ এবং ৬৯ রকম স্তন্যপায়ীর দেখা মেলে এখানে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ম্যাকারেনার সংরক্ষিত এলাকা। নদীর জলে সাঁতার কাটার সুযোগও দেওয়া হয় পর্যটকদের। তবে পরিবেশের কথা ভেবে দিনে ২০০র বেশি পর্যটককে ঢুকতে দেওয়া হয় না ম্যাকারেনায়। নদীর ধারে রাত্রিযাপনের জন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা।