বিশাখপত্তনম: তিন মুখ্যমন্ত্রী ফের এক মঞ্চে। অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডু, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বিশাখাপত্তনমের জনসভায় একই মঞ্চে মহাজোটের বার্তা দিলেন। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য জুড়ে রইল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও।
এ দিন বিকেলে প্রিয়দর্শিনী স্টেডিয়ামে চন্দ্রবাবু নায়ডুর প্রচারে জনসভায় যোগ দিয়ে মমতা ফের একবার বিরোধী জোটের হয়ে সওয়াল করলেন।এখনও বাংলায় প্রচার শুরু করেননি তিনি। কিন্তু উনিশের ভোট ঘোষণা হওয়ার পর রবিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি সারলেন অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে। জানিয়ে দিলেন ইংরাজি অ্যালফাবেট অনুযায়ী প্রচার শুরু করলেন তিনি। এর পর ঢুকবেন বাংলায়। বঙ্গোপসাগর আর পশ্চিমঘাট পর্বতের সহাবস্থানের শহর থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে, ৫৬০ ইঞ্চি ঝুট। সকালে ঝুট , দুপুরে ঝুট, বিকেলে ঝুট, রাতেও ঝুট। এই মোদী চাই না। এই বিজেপি চাই না।খালি ইনকাম ট্যাক্সস রেইড করান। শূন্য কলসি বেশি বাজে। পার্টি অফিস একেবারে শপিংমল হয়ে গিয়েছে। নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। সবার বিরুদ্ধে এজেন্সিকে কাজে লাগান। রাফাল নিয়ে কোনও ব্যাখ্যাই দেননি।” তিনি আরও বলেন,”পুলওয়ামার একটা ঘটনা ঘটেছে। তারপর সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে? সবাই বলেছিলাম, সরকারের সঙ্গে রয়েছি। আমরা করিনি। কিন্তু মোদী কী করেছেন! নোটবন্দির সময় বলেছিলেন, দেশে সন্ত্রাসবাদ থাকবে না। দেখুন বেড়ে গিয়েছে। দাঙ্গা চাই না, তাই মোদী চাই না। ঠিক একই কথা প্রতিধ্বনিত হল চন্দ্রবাবু এবং কেজরিওয়ালের বক্তব্যেও।
বক্তৃতার শুরুতেই তেলগু ভাষায় মুখবন্ধ করেন মমতা। দক্ষিণ কলকাতার বাঙালির মুখে তাঁদের ভাষা শুনে করতালিতে ফেটে পরে সমাবেশ স্থল। মমতা বলেন, তিনি তেলগু বোঝেন। কিন্তু সবটা ভাল করে বলতে পারেন না। তাই বক্তৃতার অধিকাংশটাই হিন্দিতে বলেন দিদি। মাঝে মাঝে অবশ্য বাংলা এবং ইংরাজিও বলেন তাঁর স্বাভাবিক ছন্দে। অন্ধ্রের মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ইয়ে চুনাও, স্পেশাল চুনাও হ্যায়। শোচকে ভোট দেনা হ্যায়।প্রতিটি রাজ্যে থেকে দিল্লির রাস্তা দেখাতে হবে। অনেকে বড়ো বড়ো কথা বলেন। কিন্তু দেশের জন্য লড়াই করতে চান না। ফলে তাঁদের পক্ষে দেশের নেতা হওয়া মানায় না। মোদী প্রধানমন্ত্রী এটাই দুর্ভাগ্য।”
রবিবার বিকেলেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৫০০টি জায়গায় ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ প্রচারে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্ধে বেলা দিদি কিন্তু তা নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়লেন না। বিশাখাপত্তনমের সমাবেশ থেকে বললেন, “আগের বার চাওয়ালা সেজেছিল। এ বার চৌকিদার সেজেছে। কীসের চৌকিদার? দেশ লুঠের চৌকিদার, নোটবন্দির চৌকিদার, বেকারত্বের চৌকিদার।” মোদীর বক্তৃতা নিয়েও এ দিন বিস্তর ব্যঙ্গ করেন মমতা। বলেন, “কই দেখুন তো আমার কাছে কোনও টেলিপ্রম্পটার আছে কি না। কিন্তু ওঁর টেলিপ্রম্পটার থাকে। দেখে দেখে, শুনে শুনে বক্তৃতা দেন।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “ব্লকের নেতা হওয়ার যোগ্যতা নেই, দেশের নেতা হবেন।” মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, “আপনি যে কোনও ন্যাশনাল চ্যানেলে ডিবেটে বসুন। বিরোধীদের পক্ষ থেকে কেউ থাকবে। আমি তৈরি। কাগজ ছাড়া, টেলিপ্রম্পটার ছাড়া বিতর্ক করুন। দেখা যাবে তারপর।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, ব্রিগেডের সভায় মমতাকে যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, এ দিন তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। তাঁদের মতে, সে দিনও যে ভাবে জাতীয় স্তরের বিরোধী বৃত্তের নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন মমতা, এ দিনও তাই।