Site icon The News Nest

‘স্বপ্নের নীলাভ সাঁকো বেয়ে’ চলে গেলেন পরপারে…আজ কবি শামসুর রহমানের প্রয়াণদিবস

SHAMSUR RAHMAN

কবি শামসুর রাহমান। বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল নাম। পনেরো বছর আগে ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।

সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে তিনি নাগরিক কবি হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কবিতায় নগরজীবনের প্রতিচ্ছবি উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে। সত্যিকারার্থে তার কবিতার শব্দরা সেই কথা বললেও আমার মনে হয় না তিনি কেবল শহুরের যান্ত্রিক জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, টানাপোড়েন আর দুঃখ-বেদনাকে ছুঁয়ে দেখেছেন তার চেতনার অনুভবে। যদি তার বিপুল সৃষ্টি ভান্ডারের দিকে সচেতন পাঠকের মতো তাকাই, তার কবিতার শব্দকে নিয়ে দক্ষ পর্যবেক্ষকের মতো পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে দেখতে পাই এক নতুন কবিকে, যিনি নাগরিক জীবনকে জয় করে সামগ্রিক জীবনের কথা বলে।

এই সামগ্রিক জীবন চেতনার নামই হলো জাতীয় চেতনা। কবি জাতীয় চেতনায় ছিলেন সমুজ্জ্বল, আপসহীন এক অনড় শিল্পী। এই নিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজও করে গেছেন শিল্পজীবনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনাকে এত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’য় তিনি বলেন ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা/তোমাকে পাওয়ার জন্যে,/আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়,/আর কতবার দেখতে হবে খান্ডব দাহন।’

একটা সময়ে জীবনানন্দ-নজরুল ও রবীন্দ্রবলয় ভেঙে তৈরি করলেন নতুন এক বলয়। সেই বলয়ে আবর্তিত হতে থাকল বাংলা কবিতা। তিনি সময়কে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের মতো কবিতার পথ তৈরি করে নিলেন। সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে বাংলা কবিতা বাঁক নিল। শুরু হলো শামসুর রাহমান যুগ। ‘স্বাধীনতা তুমি কবিতায় গর্জে উঠল সেই পঙ্‌ক্তিমালা- স্বাধীনতা তুমি/রবিঠাকুরের অজর কবিতা,/অবিনাশী গান,/স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা।’

আরও পড়ুন: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের আজ জন্মদিন, জানুন কবির না জানা বহু কথা

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তার কবিতায় দেখিয়েছেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। বাঙালিদের মনে-প্রাণে জুগিয়েছেন অপার সাহস। সেই দুঃসময়ে তার কবিতা অনন্ত প্রদীপের মতো আশার আলো জ্বালিয়েছিল। তার কবিতা পড়লে আজও আমাদের রক্ত শিরায় বারুদের স্ম্ফুরণ হয়। আজও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।

এ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য তিনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। শব্দের রাইফেল হাতে কবিতায় সতত জেগে ছিলেন নির্ভীক সৈনিকের মতো। আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তার বিপুল সৃষ্টিসম্ভার যুগ-যুগান্তর আমাদের সাহস ও শক্তি জুগিয়ে যাবে। আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন: ‘কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম, গন্ধভরা ঘাস’- আজ কবি আল মাহমুদের জন্মদিন

 

Exit mobile version