Sadhan Pande Passes Away With A Record As A MLA Of West Bengal Assembly

Sadhan Pande: প্রয়াত নেতার দখলে সেই রেকর্ড, যা স্বয়ং তাঁর দলনেত্রীরও নেই!

উত্তর কলকাতার কংগ্রেসি রাজনীতির অজিত পাঁজার (Ajit Panja Follower) অনুগামী হিসেবে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। মানিকতলা, বড়তলা এলাকার একদা দাপুটে বাম-বিরোধী রাজনীতির মুখ ছিলেন সাধন পাণ্ডে (Sadhan pandey)। অজিত পাণ্ডেকে সামনে রেখেই জাতীয় স্তরে কংগ্রেসি (Congress) রাজনীতির মুখ হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ক্রমেই তিনি নজরে পড়েন ইন্দিরা ঘনিষ্ঠ নেত্রী রাজেন্দ্রকুমারী বাজপেয়ির। উত্তর প্রদেশের একদা এই দাপুটে নেত্রী তাঁর উপর বাজি রাখতে শুরু করেন।

তবে সংসদীয় বা পরিষদীয় রাজনীতিতে সাধনবাবুর হাতেখড়ি ১৯৮৫ সালে। তার আগের বছর কলকাতা উত্তর-পূর্ব আসন থেকে লোকসভায় কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন অজিত পাঁজা। সেই সময় তিনি ছিলেন বড়তলার কংগ্রেস বিধায়ক। তাই সংসদীয় বিধান মেনে তাঁকে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। শূন্য সেই আসনে কংগ্রেস হাইকমান্ড এবং প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে বাজি ধরা হয় সাধন পাণ্ডেকে। সেবার প্রথম বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতে রাজ্য বিধানসভায় প্রবেশ করেন তিনি।

তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বড়তলা বিধানসোভা কেন্দ্রের সঙ্গে নাম জুড়ে যায় সাধন পাণ্ডের। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট ৯ বার বিধায়ক হয়েছেন একদা কংগ্রেস হাইকমান্ড এবং সাম্প্রতিককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুডবুকে থাকা এই রাজনীতিবিদ। ১৯৮৫-২০০১ পর্যন্ত কংগ্রেসের বিধায়ক হিসেবে উত্তর কলকাতায় রাজনীতি করতেন তিনি।

২০০১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নাউ ওর নেভার’ ডাকে সাড়া দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন সাধন পাণ্ডে। সেই বছর থেকে ২০২১ পর্যন্ত তৃণমূলের বিধায়ক হিসেবে জিতে এসেছেন সাধন পাণ্ডে। এমনকি, ২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমরা ২৩৫ ওরা ৩০ মন্তব্যের সময়েও বড়তলার তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। ২০০৯ সালে আবার আসন ডি-লিমিটেশনের ফলে বিলোপ হয় বড়তলা বিধানসভা আসন। সেই জায়গায় নতুন বিধানসভা কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসেন মানিকতলা কেন্দ্র। বাংলায় পরিবর্তনের রাজনীতির শেষ দশ বছরে সেই আসনের তৃণমূল বিধায়ক হিসেবেও দাপুটে ছিলেন সাধন পাণ্ডে। মমতা সরকারের আমলে সাধন পাণ্ডে বনাম পরেশ পাল দ্বৈরথ একদা খবরের শিরোনামে এসেছিল।

সেই দ্বৈরথের মাঝেও সাধন দা-র প্রতি ভরসা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একুশের ভোটের পর তাঁকে জোড়া দফতরের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রেতা সুরক্ষার পাশাপাশি স্বনির্ভর এবং স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী হিসেবে কাজ সামলেছেন তিনি।

২০০৬ সালের পর বিরোধী নেত্রী মমতার রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন তিনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে। এমন গুঞ্জন কলকাতার রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুঁদে এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নিজের ভুল বোঝেন। বঙ্গ রাজনীতির স্রোত আগামি দিনে মমতার দিকেই বইবে, এই পূর্বাভাস অনুধাবন করে ফের মমতার পাশে দাঁড়ান সাধন। যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন। কথিত আছে তৃণমূল কংগ্রেসে সাধন পাণ্ডে অন্যতম রাজনীতিবিদ, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাম ধরে ডাকতেন। আর সাধন দা বলেই পাল্টা প্রত্যুত্তর দিতেন মুখ্যমন্ত্রী।

অসুস্থ ছিলেন অনেক দিনই। কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে হয়েছিল বছর দশেক আগে। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বেও এক বার ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন। নির্বাচনে বিজেপি-র কল্যাণ চৌবেকে হারান ২০,২৩৮ ভোটে।

জুলাই মাসের মাঝামাঝি ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাধন। ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত মন্ত্রীকে ১৬ জুলাই রাতে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তখন তিনি অনেকটাই সংজ্ঞাহীন। কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। সেপ্টেম্বরে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হল তাঁর। দীর্ঘদিনের সতীর্থ সাধনের মৃত্যুর খবর দিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে জানিয়েছেন, ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাধনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রবিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।