নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: কুন্তল কাঁড়ার এবং বিপ্লব বৈদ্যের মৃত্যুতে যখন শোকে বিহ্বল বাংলার পর্বতারোহী মহল, তখনই কিছুটা স্বস্তির খবর শোনা গেল অসুস্থ হয়ে পড়া আরও দুই পর্বতারোহী রমেশ রায় এবং রুদ্রপ্রসাদ হালদারকে নিয়ে।
পর্বতারোহণ সম্পর্কিত পোর্টাল ‘ড্রিম ওয়ান্ডারলাস্ট’-এর তরফ থেকে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টায় ক্যাম্প-২ থেকে হেলিকপ্টারে কাঠমান্ডুতে নামিয়ে আনা হয়েছে রমেশ এবং রুদ্রপ্রসাদকে। নেপালের রাজধানীতে একটি হাসপাতালে ওই দু’জনের চিকিৎসা চলেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এখনও বিপ্লব এবং কুন্তলের মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। পর্বতারোহণ সংস্থা সোনারপুর আরোহীর ফেসবুকে করা পোস্ট অনুযায়ী, “কুন্তল ও বিপ্লব দু’জনেই হাই অলটিচ্যুড পালমোনারি ইডিমায় আক্রান্ত হয়েছিল। কুন্তল সামিটে যাওয়ার আগে (খুব সম্ভবত ৮০০০ মিটারের পর), বিপ্লব সামিট ছুঁয়ে ফেরার সময়। এসওএস পাওয়ার পরেই পাঁচ জনের রেসকিউ টিম অকুস্থলে যায় এবং আপ্রাণ চেষ্টা করে ওদের সামিট ক্যাম্পে নামিয়ে আনার। কিন্তু উভয়ে একেবারে নিশ্চল হয়ে পড়ায় এবং ইতিমধ্যে আকাশ ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার কারণে সবার সব রকম চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়। নির্মল পুর্জার মতো অভিজ্ঞ শেরপার নেতৃত্বও হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে।”
নির্মল পুর্জা ফেসবুকে জানান: ৮৪৫০ মিটার উঁচুতে তাঁরা প্রথমে বিপ্লবকে দেখতে পান। বিপ্লবের অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। নির্মল তাঁদের বাড়তি অক্সিজেন তাঁকে দিয়ে আরও ১৫০ মিটার নেমে দেখেন, কুন্তলেরও অক্সিজেন শেষ। তিনি নিজের অক্সিজেন তাঁকে দিয়ে দেন। রেডিয়োয় যোগাযোগ করে আরও অক্সিজেন চেয়ে পাঠান। নির্মল লিখেছেন, তাঁদের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় কুন্তলের। বিপ্লবকে নিয়ে নামতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু সব থেকে সমর্থ শেরপাও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। নির্মলের আক্ষেপ, সেই সময় কাঞ্চনজঙ্ঘায় অন্তত ৫০ জন অভিযাত্রী ছিলেন। সকলে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে কুন্তল-বিপ্লবকে হয়তো বাঁচানো যেত।
উদ্ধারকাজ নিয়ে আয়োজক সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন পর্বতারোহী মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘এই ওয়েদার উইন্ডোর মধ্যে ওদের (কুন্তল-বিপ্লব) নামিয়ে আনতে হবে। নইলে গোটা একটা বছর দেহ উদ্ধারের আশা পিছিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে খরচের পরিমাণ।’’ ক্যাম্প টু-এ বসে একই চিন্তায় রয়েছেন রুদ্রপ্রসাদ। এ দিন তাঁর মেসেজ, ‘যা সেট আপ রয়েছে, তাতে সব চেয়ে কম খরচে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ক্যাম্প থ্রি পর্যন্ত দু’জনের দেহ আনতেই ২০ লক্ষ নেপালি টাকা লাগবে। তার পরে হেলিকপ্টারে কাঠমান্ডু। এখনই কিছু না-করলে বছরের পর বছর চলে যাবে।’ দেহ উদ্ধারে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘আমরা লোক পাঠাচ্ছি।’’ ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেছেন, ‘‘নেপাল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি বিধি অনুযায়ী উদ্ধারকাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। দু’জন আধিকারিককে কাঠমান্ডু পাঠানো হচ্ছে।’’ তবে কুন্তল-বিপ্লবের দেহ ক্যাম্প ফোরের উপরে থাকায় নতুন করে সেখানে শেরপা পাঠানো কতটা সম্ভব এবং আবহাওয়া কতটা অনুকূল থাকবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।