কর্ণাটকের তখতে বর্তমানে বিজেপি। সে রাজ্যের স্কুল পাঠক্রম থেকে টুপু সুলতানকে বাদ দেওয়া হল। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজনৈতিক ভাবাবেগ থেকেই এ কাজ করেছে বিজেপির সরকার। তবে প্রশাসনের সাফাই, করোনার কারণে সিলেবাস কমানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই এ কাজ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
কর্ণাটক বোর্ডের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাসে বিশদে হায়দার আলি এবং টিপু সুলতানের মহিশূর সাম্রাজ্যের কথা ছিল। আঠারো শতকে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজা ছিলেন টিপু। কখনও ইংরেজদের কাছে নতজানু হননি। বস্তুত, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বিতর্কের জেরেই শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে যেতে হয় মহিশূর সাম্রাজ্যকে। ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালায় টিপুর সেনা। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে হার মানতে হয়। রণক্ষেত্রেই মৃত্যু হয় তাঁর।
শুধু কর্ণাটক নয়, গোটা ভারতেই টিপু সুলতানের ইতিহাস পড়ানো হয়। তাঁকে বাদ দিয়ে মহিশূর সাম্রাজ্যের ইতিহাস বোঝা অসম্ভব। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপি এবং আরএসএস এর দাবি টিপু সুলতানের যে গৌরবের ইতিহাস পড়ানো হয়, তা ঠিক নয়। স্থানীয় মানুষদের উপর প্রবল অত্যাচার চালিয়েছেন তিনি। বহু মানুষকে হত্যা করেছেন। এমনকী, জোর করে ধর্মান্তরিতও করা হয়েছে তাঁর আমলে। এই কারণেই টিপু সুলতানের ইতিহাস বদলের দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছে বিজেপি।
আরও পড়ুন : বাবুলের বাংলোয় আধ ডজন সাংসদ, জম্পেস খাওয়া দাওয়া ‘জানতেনই না’ দিলীপ
বিশিষ্ট ঐতিহাসিকরা কখনওই সেই দাবিকে খুব গুরুত্ব দেননি। তাঁরা বলেছেন, কাউকে ছোট করা বা বড় করা ইতিহাসের কাজ নয়। ইতিহাস সময়ের কথা বলে। সেখানে টিপুর অত্যাচারের কথাও যেমন বলা হয়েছে, বীরত্বের কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়েই মহিশূর সাম্রাজ্য। এবং ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত জরুরি সময়।ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের তরফে জানানো হয়েছে সিলেবাসে এই পরিবর্তন শুধুমাত্র চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্যেই।
২০০৫ সালে স্কুলের সিলেবাস চূড়ান্ত করার জন্যে যে পাঠ্য পুস্তক রিভিউ কমিটি তৈরি হয়েছিল, তার চেয়ারম্যান বড়গুরু রামচন্দ্রপ্পা জানান, ‘সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার অন্তত টেক্সট বুক রিভিউ প্যানেলের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারত। সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম থেকে টিপু সুলতানের সেই অধ্যায় সরিয়ে দেওয়া হল যেখানে তাঁর সম্পর্কে অনেক তথ্য ছিল। যদি একান্তই তাঁর উপর কোনও অধ্যায় বাদ দেওয়ার হত, তাহলে ষষ্ঠ শ্রেণীর বই থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারত।’
হাম্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক টি আর চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, ‘কোভিড সংকটকে শিখণ্ডি দাঁড় করিয়ে সরকার সেই অধ্যায়টিই বাদ দিল পাঠ্যক্রম থেকে যা এতদিন ধরে বাদ দিতে চেয়েছে তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই বাসনা তাদের মিটত না। তাই করোনা সংকটের দোহাই দিয়ে স্বার্থ চরিতার্থ করছে।’
কেপিসিসি প্রেসিডেন্ট ডি কে শিবকুমার জানিয়েছেন, ‘টিপু জয়ন্তী উদযাপন করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে। কিন্তু স্কুলের সিলেবাসে ইতিহাসকে এইভাবে বিকৃত করার অধিকার সরকারের নেই। এটা আমরা হতে দেব না।’
আরও পড়ুন : শিক্ষার আলো জ্বললেও,মুসলিম পরিচালিত বহু প্রতিষ্ঠানে সবথেকে অবহেলিত মুসলিমরাই!