Site icon The News Nest

অচেনা করোনা আতঙ্ক হাসপাতাল ছাড়া করেছে মুমূর্ষু রোগীদের

coronavirus lucknow doctor

সৈয়দ আলি মাসুদ

যে সব ডাক্তার কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করছেন তাদের জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে। আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই । কলকাতার কিছু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মারাত্মক শাররীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হচ্ছে পেশাগত কারণে। তাঁরা আসলে নিজেদের দায়িত্বই পালন করছেন। কৃষক যেমন নিজের দায়িত্ব পালন করেন, খনি শ্রমিক নিজ কর্তব্যে অবিচল থাকেন, সীমান্তে সেনা যেমন বন্দুক উঁচিয়ে আমাদের নিরাপত্তা দেয় এটা তেমনই দায়িত্ব।

আরও পড়ুন: দূর থেকে ভালোবাসা! এবারের বৈশাখ আসুক বাড়িতেই

তাছাড়া দেশজুড়ে সব চিকিৎসকদের এমন কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে না। তারা মানসিক কষ্টে থাকলেও বাস্তবে তত কষ্ট তাদের নেই। বরং এই করোনার কারণে হাসপাতালে বাকি সব চিকিৎসা চলছে নম নম করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ভাবলেশহীনভাবে বলে দিচ্ছেন, ‘এখন আসবেন না। দেখছেন না লকডাউন চলছে।’ বাকি অসুখ যেন করোনার কথা শুনেই ভেগে পড়বে। তারা হাত কচলে বলবে , ‘ও করোনা এসে গিয়েছে তাহলে আমরা দুগ্গা দুগ্গা বলে চলে যাই। খুদা হাফেজ।’ যার ওষুধ নেই, যার চিকিৎসাই নেই যত মাথাব্যাথা তাকে ঘিরে। কিছুটা চিকিৎসা পেলেই যারা সেরে উঠতে পারত, বিনা চিকিৎসায় তাদের দিনে কাটছে ঘরে। কে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে। কিভাবেই বা তারা যাবে। গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ। কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনও কথা নেই।

কেবল সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি নার্সিং হোমগুলির অবস্থাও করুণ। সেখানে রোগী নেই , ডাক্তারও নেই। অলস ভাবে দিন কাটাচ্ছেন নার্সিংহোমের স্বাস্থ্য কর্মীরা। তবে এখন আবার করোনা নিয়ে আতঙ্কে না ভুগলেও মুশকিল। সকলে ভাববেন আমি রাষ্ট্র নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বকে খুব একটা আমল দিচ্ছি না। ডিসক্লেমারে জানাই আমিও ঘরেই দিন কাটাচ্ছি। জুলপি যা বড় হয়েছে তাতে সামনে একটা কঞ্চি ধরলে বোধয় পাক মেরে উঠতে পারবে। আমি সব সরকার বাহাদুরেরই আজ্ঞাবহ। তারপর কিছু কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। এই তো সেদিন বিহারে অসহায় মা তাঁর অসুস্থ শিশু নিয়ে ঘুরেছেন এই হাসপাতাল থেকে সেই হাসপাতাল। কোথাও চিকিৎসা মেলেনি। নিথর শিশুর দেহ কোলে নিয়ে ফিরতে হয়েছে ভারাক্রান্ত মাকে। শববাহী গাড়ি পর্যন্ত মেলেনি। মৃত শিশু কোলে আঁকড়ে ফিরতে হয়েছে মাকে। যদি ওই শিশুর করোনা হত, কিংবা শিশুর মায়ের করোনা হত তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু হত। মিডিয়ায় খবর হত। চারিদিকে হুড়োহুড়ি পরে যেত।

আরও পড়ুন: বিরলতম ঘটনা! জেব্রা-গাধার মিলনে জন্ম নিল ‘জঙ্কি’

অজানা অসুখ। তামাম বিশ্ব চিন্তিত। ওষুধ নেই। অথচ যে সব অসুখের ওষুধ আছে, একটু চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে তার প্রাণের কথা আমরা সবাই ভুলতে বসেছি। এমনটা আর কতদিন চলবে। অসুখের এই কুলিন-চাঁড়াল বিচার বন্ধ হবে কবে? আপনারা কি মনে করেন, দেশে অসুস্থ মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছে? ভুল ভাবছেন। বহু রোগী বাড়িতে যন্ত্রনায় ছটফট করছে। বাড়ির লোক ঠিক করেছে হাসপাতালে গিয়েও তো বিশেষ লাভ হবে না, তাতে ঘরেই মরুক। এমন অপপ্রচার হয়েছে যে হাসপাতাল গেলে সেখান থেকে অবশ্যই করোনা সংক্রমণ হবে। ফলে রোগীর বাড়ির লোকজনও হাসপাতাল নিয়ে যেতে চাইছেন না।

আসলে অচেনা আতঙ্ক আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। চেনা রোগে আমাদের এখন আর ভয় নেই। ক্যান্সার একই রকম প্রাণঘাতী রয়েছে। হৃদরোগও তেমনি রয়েছে। তার আরোগ্যের নয়া কোনো বন্দোবস্ত হয়নি। কিন্তু সেটা চেনা অসুখ। তাই এখন আর তাতে আতঙ্ক নেই। করোনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের গান কপচালে এখন সবাই খচে যাবে।কবি লিখেছিলেন অচেনাকে ভয় কি আমার ওরে।

আরও পড়ুন: ওলাওঠা সেকেলে, এখন ট্রেন্ডিং গালাগালি হল ‘করোনা’

কিন্তু আজ যারা অসুস্থ তারা আর একটু দম ধরে যন্ত্রনা সহ্য করুন। কি আর করবেন। আর নেটবাসীদের কাছে আবেদন ডাক্তারদের ভগবান ডাকা বন্ধ করুন। ডাক্তারের হাতে কেবল চেষ্টাটুকু থাকে। আয়ু নয়। যদি ডাক্তারের হাতে আয়ু থাকত তাহলে ডাক্তাররা মারা যেতেন না। ডাক্তার নয়, মানুষের ভিতরেই একটা প্রবল প্রতিরোধ শক্তি থাকে। সেটাই আমাদের ভিতরের ডাক্তার। এদেশের অগণিত মানুষ এই ভিতরের ডাক্তারের ভরসায় থাকেন। তাই ঘায়ের ওপর ধুলো দিয়েও বহু গরিব মানুষ দিব্যি ভালো হয়ে যান। আর সামান্য মাছের কাঁটা গলায় আটকে বড় হাসপাতালে সেপ্টোসেমিয়া হয়ে তিনদিনের মাথায় কারো প্রাণ যায়।

সব ডাক্তারকে করোনার হ্যাপা সামলাতে হচ্ছে না। যাদের সামলাতে হচ্ছে তাদের হ্যাটস অফ। এখন তাঁরা অনেকেই বলছেন আমরাও তো মানুষ! এটাই করোনারই দান। এতদিন অসহায় রোগীর বাড়ির লোকজনের গলায় এই আফসোসের সুর শোনা যেত। এখন মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে করোনা কি তাহলে অচেনা শিক্ষক? কারও নির্দেশে কি বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দিতে তার আগমন? বড় গোলমেলে লাগছে সব কিছু। যাই বরং হাত ধুয়ে আসি!

আরও পড়ুন: জেনে নিন করোনা মুক্ত ৪ দেশ যেভাবে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে

Exit mobile version