#ম্যাঞ্চেস্টার: ২৬ বছর আগে যে ম্যাঞ্চেস্টার থেকেই উদয় হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের, সেই ম্যাঞ্চেস্টারই এ বার হতাশায় ডুবিয়ে দিল ভারতকে। যে ম্যাঞ্চেস্টার ভারতের কাছে সব সময় গর্বের, সেই মাঠই গোটা ভারতকে হতাশায় ডুবিয়ে দিল। লর্ডসে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিরাটবাহিনীর কাছে অধরাই থেকে গেল। রূপকথাটা যেন অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ দুর্দান্ত লড়াই করে ধরাছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে আসা। আবার যখনই মনে হল ম্যাচ যেন হাতের মধ্যে, তখনই আবার এক ঝটকায় তা বেরিয়ে গেল ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জাদেজা-ধোনিরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলেন না। ম্যাঞ্চেস্টারে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১৮ রানে হারল টিম ইন্ডিয়া। ২০০৮ সালে কোহলির বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে হারের মধুর বদলা নিল কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড।
মঙ্গলবারের ঘটনায় প্রথমে ফিরে যাওয়া যাক। মেঘলা আবহাওয়ায় প্রথমে বল করার সুযোগ যে ভারতের কাছে আখেরে লাভেরই হবে, সেটা একটা আন্দাজ করাই গিয়েছিল। যতই পিচে পেসারদের জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা না থাকুক, শুরুর দশ ওভার ভারতের পেসাররা জোরদার দাপট দেখিয়ে গেলেন। পেসারদের দাপট এতটাই বেশি ছিল যে এই বিশ্বকাপের প্রথম দশ ওভারের সর্বনিম্ন স্কোরটি উঠল এই ম্যাচেই।
প্রথম দশ ওভারে অত কম রান ওঠার জের কিছুতেই কাটাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। উইকেট সে ভাবে না পড়লেও, রানের গতি কিছুতেই বাড়ছিল না। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন তো রোজকার মতোই, একটা দিক ধরে রেখে ঠান্ডা মাথায় নিজের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু অন্য দিকে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেই বেশি পরিচিত রস টেলর ভয়ংকর ভাবে আটকে গিয়েছিলেন। এর ফলে ৪০ ওভার যখন নিউজিল্যান্ড পেরোচ্ছে তখন তাদের স্কোর মাত্র ১৫৫। তবে এখান থেকেই কিছুটা রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে কিউয়িরা। সেই গতি বাড়ানোয় নেতৃত্ব দেন কলিন ডে গ্র্যান্ডহোম। একটু পরে হাত খোলেন টেলরও। ফলে ৪০ থেকে ৪৬ ওভার পর্যন্ত প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি রান তুলে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
একদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিন। এই কথাটি খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার কল্যাণে এই বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে সেটাই হল। নিউজিল্যান্ডের এ দিন টার্গেট ছিল, যত কম সময়ে যত বেশি রান তোলা যায়। তা বিপক্ষে যখন ভুবনেশ্বর কুমার এবং জশপ্রীত বুমরাহর মতো বোলার রয়েছেন, রানের গতি বাড়ানো যে খুব কষ্টকর, তা তো বলাই বাহুল্য। তবুও কিউয়ি ব্যাটসম্যানরা চেষ্টার কোনো খামতি রাখেননি। ২৫০ রান না উঠলেও, যেটা উঠেছে সেটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং স্কোরই ছিল। গতকাল বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় স্কোরবোর্ডে ৪৬.১ ওভার শেষে কিউইদের রান ছিল ২১১/৫। বুধবার রিজার্ভ ডে-তে এখান থেকেই শুরু হয় খেলা। শেষপর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে নিউ জিল্যান্ড।
স্কোরটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেটা ভারতের ব্যাটিং ইনিংসের প্রথম পাঁচ ওভারেই বোঝা গেল। ট্রেন্ট বোল্ট আর ম্যাট হেনরির গতি এবং সুইং সামলাতে না পেরে দ্রুত ফিরলেন রোহিত, কোহলি এবং রাহুল। তিন জনেরই স্কোর ১। এর পর যখন দশম ওভারের শেষ বলে কার্তিক আউট হলেন, তখনই মোটামুটি আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা। কারণ ঋষভ পন্থ এবং হার্দিক পাণ্ড্য সেট হতে শুরু করলেও কোনো উদ্যম দেখা যায়নি। পন্থ যখন উদ্যম দেখিয়ে ছয় মারার চেষ্টা করলেন তখন বাউন্ডারি লাইনের ধারেই তালুবন্দি হয়ে গেলেন। একশো পেরোনোর আগে ফিরলেন হার্দিক পাণ্ড্যও।
তখন ভারতের একমাত্র আশা এবং ভরসা ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু যাকে হিসেবের মধ্যেই রাখা হয়নি, তাঁর ব্যাটই জ্বলে উঠল হঠাৎ করে। তিনি রবীন্দ্র জাদেজা। সঞ্জয় মঞ্জেরেকরের সঙ্গে তাঁর কী রকম ঝামেলা চলছে, তা তো আমরা সবাই জানি। মহাগুরুত্বপুর্ণ এই ম্যাচেই সম্ভবত সঞ্জয়কে জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জাদেজা।
জাদেজা যখন মারছিলেন, তখন উলটো দিক থেকে তাঁকে স্ট্রাইক দিয়ে যাচ্ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু কোথাও যেন, আবার ধোনির ক্রিজে আটকে যাওয়ার ব্যাপারটি সামনে চলে এসেছিল। শুরুর দিকে তিনি যদি আর একটু চালিয়ে খেলতেন তা হলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতেই পারত। একটা সময়ে কার্যত বাধ্য হয়েই ওড়াতে গেলেন জাদেজা এবং উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হলেন। তখন শেষ ভরসা ছিলেন ধোনিই।
ধোনির জীবনে এটিই সম্ভবত সব থেকে খারাপ অর্ধশতরান। অর্ধশতরান করেও কোনো রকম উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে ব্যর্থতার মুখ দেখিয়ে ফিরে যেতে হল তাঁকে। আর তখনই সরকারি ভাবে যবনিকা পড়ে গেল ম্যাচে।
২০১৫-এর বিশ্বকাপের মতোই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল ভারত। আবার ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড। আবার চার বছরের অপেক্ষা শুরু ভারতের।